• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসুন ৫টি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | ভ্রমণ ডেস্ক অক্টোবর ১০, ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসুন ৫টি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য

যারা ঘুরতে ভালোবাসেন, তাঁদের মধ্যে কম-বেশি সবারই দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা থাকে। তবে অনেক সময় ভিসা পাওয়ার জটিলতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঝামেলা বা খরচের চিন্তায় বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে পিছপা হন অনেকে। কিন্তু চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন দেশের বাইরে থেকেও। কারণ, বেশ কিছু দেশে রয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা শিথিলতা।
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স ২০২৫ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ৩৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। 
দেশগুলো হলো বাহামা, বার্বাডোজ, ভুটান, বলিভিয়া, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, কেপ ভার্দে আইল্যান্ডস, কমোরো আইল্যান্ডস, কুক আইল্যান্ডস, জিবুতি, ডমিনিকা, ফিজি, গ্রেনাডা, গিনি-বিসাউ, হাইতি, কেনিয়া, কিরিবাতি, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, মাইক্রোনেশিয়া, মন্টসেরাত, মোজাম্বিক, নেপাল, জ্যামাইকা, নুউয়ে, রুয়ান্ডা, সামোয়া, সিশেলস, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, গাম্বিয়া, পূর্ব তিমুর, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, টুভালু ও ভানুয়াতু। 
এসব দেশের মধ্যে রয়েছে এমন পাঁচটি দেশ, যেগুলো ভ্রমণের জন্য বেশ জনপ্রিয় এবং সব সময় থাকে ভ্রমণপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে।
১. মালদ্বীপ
ভারত মহাসাগরের বুকে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১ হাজার ২০০টির বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। নীল সমুদ্র, সাদা বালুর সৈকত আর বিলাসবহুল রিসোর্ট সব মিলিয়ে এটিকে বলা হয় ভ্রমণপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। বাংলাদেশের নাগরিকেরা মালদ্বীপে পৌঁছেই অন অ্যারাইভাল সুবিধা পান, আর ঢাকা থেকে মালে পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইটে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। মোটামুটি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বাজেটই যথেষ্ট, যার মধ্যে বিমানভাড়া, থাকা ও খাবারের খরচ অন্তর্ভুক্ত। সাশ্রয়ীভাবে মালদ্বীপে ঘুরতে আগেভাগে টিকিট কাটা, বিলাসবহুল রিসোর্টের পরিবর্তে লোকাল আইল্যান্ডে থাকা এবং এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে সরকারি বাহন ব্যবহার করা ভালো। মালে শহর, হুলহুমালে সৈকত, মাফুসি দ্বীপ ও আন্ডারওয়াটার রেস্টুরেন্টগুলো মালদ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে স্বল্প বাজেটের মধ্যেও উপভোগ করা যায় নীল সমুদ্রের স্বপ্নিল সৌন্দর্য।
২. নেপাল
হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত পাহাড়ের দেশ নেপাল অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির জন্য বিশ্বব্যাপী ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুতে সরাসরি ফ্লাইটে যেতে সময় লাগে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা, আর বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য রয়েছে অন-অ্যারাইভাল ভিসাসুবিধাও। সাশ্রয়ীভাবে নেপাল ভ্রমণে বিমানভাড়া, থাকা, খাবারসহ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। নেপালের প্রায় সব স্থানই যেন পর্যটকদের জন্য অপেক্ষমাণ। তবে পোখারা, কাঠমান্ডুর ঐতিহাসিক দরবার স্কয়ার, রানিপোখরি, সারাংকোট ও নাগরকোট নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও অ্যাডভেঞ্চার সব মিলিয়ে হিমালয়কন্যা নেপাল ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতার দেশ। নেপাল ভ্রমণের জন্য বসন্ত; অর্থাৎ মার্চ থেকে মে এবং শরৎ ও হেমন্ত; অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-নভেম্বর সবচেয়ে ভালো সময়।
৩. ভুটান
‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ নামে পরিচিত ভুটান বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে একটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা ভুটানকে পরিণত করেছে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশি নাগরিকদের ভুটান ভ্রমণে আগাম কোনো ভিসা লাগে না, সীমান্তে প্রবেশ অনুমতি নিলেই হয়। ঢাকা থেকে ভুটানের পারো শহরে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভুটানে সাশ্রয়ীভাবে ঘুরে আসতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। ভুটানে অনেকগুলো দেখার মতো স্থান রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পারোর বিখ্যাত টাইগার নেস্ট মঠ, বুদ্ধা পয়েন্ট, মেমোরিয়াল কর্টেন, সেনেটারি ফার্মার্স মার্কেট, পুনাখা জং, চিমি লাখাং, জিগমে দর্জি জাতীয় উদ্যান, থ্রুয়েপাং প্যালেস, ডামচেন লাখাং, শ্রেদা, খুয়াং লাখাং ইত্যাদি। পারো শহরটি ইতিহাসে বেশ সমৃদ্ধ একটি শহর। পারো উপত্যকাকে পৃথিবীর সবশেষ কাল্পনিক পৌরাণিক ভূমি হিসেবে ধরা হয়।
৪. শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কাকে বলা হয় ভারত মহাসাগরের মুক্তা, যা মোটেও আদিখ্যেতা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস সাময়িকী ফোর্বস এ বছর বিশ্বের যে ২৩টি স্থানকে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেখানে রয়েছে শ্রীলঙ্কার নামও। দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র প্রকৃতি, ইতিহাস ও আধুনিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ। সবুজ চা বাগান, প্রাচীন শহর ও নীল সমুদ্রের এই দেশে যাওয়া এখন আরও সহজ। বাংলাদেশিরা অনলাইনে সহজেই ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথোরিটি নিতে পারেন, যা ঠিক অন-অ্যারাইভাল ভিসার মতোই। ঢাকা থেকে কলম্বো ফ্লাইটে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কায় সাশ্রয়ীভাবে মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় ঘুরে আসা সম্ভব। শ্রীলঙ্কায় দেখার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ক্যান্ডি, সিগিরিয়া, গলে ফোর্ট, নুওয়ারা এলিয়া, অনুরাধাপুরা ও মিরিসা সৈকত অন্যতম।
৫. কেনিয়া
আফ্রিকার পূর্বভাগে অবস্থিত কেনিয়া তার বন্য প্রাণী, সাভানা প্রান্তর ও রোমাঞ্চকর সাফারি অভিজ্ঞতার জন্য বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। নাইরোবি, মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভ, অ্যাম্বোসেলি পার্ক ও লেক নাকুরু প্রতিটি জায়গাই ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এক অনন্য আকর্ষণ। এখানে সিংহ, হাতি, জিরাফ, জেব্রা ও গন্ডারের মতো বন্য প্রাণী খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ মেলে। ঢাকা থেকে নাইরোবি যেতে ফ্লাইটে সময় লাগে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অনলাইনে রয়েছে ই-ভিসার সুযোগ। সাধারণভাবে কেনিয়া ভ্রমণের জন্য বিমানভাড়া, থাকা, সাফারি, খাবারসহ মোট ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার বাজেট রাখা ভালো। প্রকৃতি ও বন্য প্রাণের মিলনস্থল এই দেশ তাঁদের জন্য আদর্শ, যারা একবার অন্তত আফ্রিকার রোমাঞ্চকর সাফারির স্বাদ নিতে চান।
সাশ্রয়ী ভ্রমণে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি
ভ্রমণের অন্তত তিন মাস আগে পরিকল্পনা করে টিকিট বুকিং করে রাখতে পারেন। এতে খরচ অনেকটাই কমে আসে। এ ছাড়া অফ-সিজনে কোথাও ঘুরতে গেলে ফ্লাইট ও হোটেলের খরচে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। ঘুরতে যাওয়ার পর সেখানে গিয়ে স্থানীয় গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে একা ভ্রমণের চেয়ে একসঙ্গে কয়েকজন মিলে কোথাও গেলে পরিবহন ও থাকা-খাওয়ার ব্যয় ভাগাভাগি করা যায়। এতেও ভ্রমণ বেশ সাশ্রয়ী হয়।

Side banner