ফরিদপুরের নগরকান্দায় দুই হাত না থাকা অদম্য কলেজছাত্র জসিম মাতুব্বরের (২৬) কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পৌঁছে দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজছাত্র জসিম মাতুব্বরের কাছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হন তিনি। উদার মনের মানুষ ইউএনওর প্রচেষ্টায় অদম্য জসিম মাতুব্বর এনআইডি পেয়ে অবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় আঙুলের ছাপ দিতে না পারায় দীর্ঘ তিন বছরেও এনআইডি কার্ড পাচ্ছিল না জসিম। অনেক চেষ্টার পর এনআইডি না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলেন জসিম। গত রবিবার বিকালে জসিমের মুঠোফোনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বার্তা আসে ‘অভিনন্দন জসিম মাতুব্বর, এটি আপনার এনআইডি নাম্বার।’ এর তিন দিন পর জসিম মাতুব্বর বুঝে পেলেন তার কাঙ্খিত সোনার হরিণ এনআইডি কার্ড।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা জসিম জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় পা দিয়ে লিখে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন জসিম। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে জসিম বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি হাটে সবজি ও ফল বিক্রি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালান। এদিকে জসিমের শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে প্রয়োজন অনুভব করেন তার এনআইডি কার্ড। এছাড়া এনআইডি না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তিনি।
বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনও দবির উদ্দিন এগিয়ে আসেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনওর উদ্যোগে জসিমকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পায়ের আঙ্গুলের স্বাক্ষর ও চোখের আইরিশ সংগ্রহ করা হয়। ইউএনওর সুপারিশসহ তথ্য পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এনআইডি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। গত রবিববার নির্বাচন কমিশন থেকে জসিমের মোবাইলে এনআইডি নাম্বারটি পান।
এনআইডি কার্ড স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে আবেগাপ্লুত জসিম মাতুব্বর বলেন, জন্ম থেকে দুই হাত না থাকার কারণে অনেক কষ্ট করেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছিলাম না। পড়াশোনা, ফরম পূরণ, পরীক্ষায় অংশ নেওয়াসহ সব জায়গায় বাধা আসত। আজ এনআইডি কার্ড পেয়ে বেশ আনন্দ লাগছে।
ইউএনও দবির উদ্দিন বলেন, জসিমের জীবনের গল্প জানার পর অনুপ্রাণিত হয়ে জানতে পারলাম হাত না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের যোগ্যতায় এসএসসি, এইচএসসি পাশ করেছেন। তার মতো একজন মেধাবী তরুণ শুধু এনআইডি না থাকার কারণে যেন পিছিয়ে না পড়েন, সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নির্বাচন কমিশনের দ্রুত পদক্ষেপে তার এনআইডি কার্ড তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের সবার জন্য আনন্দের।
আপনার মতামত লিখুন : :