দেশে বর্তমান ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ব্যবসা-বান্ধব নয় এবং তা দেশের বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতার জন্য বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আগামী মুদ্রানীতিতে সুদহার কমিয়ে ফের এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিটে) নামানোর আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, বর্তমানে দেশে ঋণের সুদের হার ১৪ শতাংশেরও বেশি, যেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১১ শতাংশ মুনাফা করতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা, বিনিয়োগ উৎসাহিত করা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সুদের হার ধীরে ধীরে সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর অনুরোধ জানিয়েছি।
আলমগীর আরও বলেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বন্যা ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা ও ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির মেয়াদ সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে। সেটি আরও ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫০ কোটি টাকার নিচের ঋণসমূহ পর্যালোচনার জন্য পৃথক কমিটি গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে, যা গভর্নর ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।
রপ্তানিমুখী শিল্পের ব্যাংকিং জটিলতা দ্রুত সমাধানে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। এ কমিটিতে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবের বিষয়ে গভর্নর সম্মতি জানান এবং একজন ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব দেন যাতে এসব বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলে ছিলেন এফবিসিসিআই মহাসচিব মো. আলমগীর, সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম হায়দার ও নিজাম উদ্দিন রাজেশ, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতা।
গভর্নর বৈঠকে জানান, আগামী মুদ্রানীতিতেই সুদের হার কমিয়ে আনা হবে।
বৈঠকে প্রতিনিধিরা বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পর নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যকে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ কার্যক্রম ত্বরান্বিত ও অর্থনৈতিক গতি ফিরিয়ে আনতে তারা বেশ কিছু প্রস্তাবনা গভর্নরের কাছে তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল—ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পের ব্যাংকিং সমস্যা দ্রুত সমাধানে ‘পয়েন্ট অব কন্টাক্ট’ স্থাপন, সুদের হার এক অঙ্কে নামানো, রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ডের পরিধি বাড়ানো ও সুদের হার হ্রাস এবং এসএমই খাতে বন্ড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুবিধা প্রদান।
ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আরও শক্ত অবস্থান তৈরি হবে।
আপনার মতামত লিখুন : :