সরকারি অনেক বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, যাদের বেতন করযোগ্য কিন্তু তারা ট্যাক্স কাটেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। এমনকি এনবিআর-আইআরডিতেও বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীও বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন করেন না বলেও জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলের ব্যাংকুয়েট হলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘অন্তরঙ্গন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এনবিআর সদস্য (করনীতি) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী। সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনের মহাসচিব ও কর পরিদর্শন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মহিদুল হাসান।
মো. আবদুর রহমান খান বলেন, গতকাল আমি আইবাস সিস্টেম থেকে ডেটা নিয়েছি যে আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কতজন বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেন। ২০১৪ সালের ফাইন্যান্স অ্যাক্টে আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন বাধ্যতামূলক। এখন যেহেতু আইবাস সিস্টেমে আমাদের বেতন-ভাতা হয়, ফলে এটা ট্র্যাক করা খুবই সহজ। আমি দেখলাম, প্রতিটি মিনিস্ট্রিতে অনেক বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের আয় করযোগ্য অথচ তারা মাসে মাসে বেতন থেকে ট্যাক্স কাটছেন না। আমি মন্ত্রণালয়ের সব সচিবকে ডিও লেটার দিয়েছি। তারা যেন অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসারকে ইনস্ট্রাকশন দেন, যেন ট্যাক্স কর্তন করা হয়।
তিনি বলেন, বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন খুবই সহজ। তারা যখন দেখবেন, বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেনি, তারা বিল প্রসেস করবে না। আমার অফিস এনবিআর, আইআরডিতেও একটা বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীও বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন করেন না। এটা উদাহরণ দিলাম যে, দেশে কমপ্লায়েন্স লেবেল কত নিম্নস্তরে। দেশের সবচেয়ে সচেতন ও গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী, তারা পর্যন্ত ঠিকমতো কমপ্লাই করেন না। অথচ কমপ্লাই করা খুবই সহজ।
আয়কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর পরিবার একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার। আমরা সবাই এ পরিবারের সদস্য। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে হয়ত আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নানা কারণে এই দূরত্ব তৈরি হতে পারে। একটা হতে পারে ইনফরমেশন গ্যাপ অথবা এক্সপেন্ডেশন গ্যাপ অথবা রেভিনিউ ইনকাম। যে কারণে হোক, সেখান থেকে শিখব। সবকিছু ভুলে আমরা নতুন উদ্যমে শুরু করতে চাই। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার সঙ্গে সবার আলাদা একটা আন্তরিকতা সম্পর্ক তৈরি হবে। যার মাধ্যমে এই গ্যাপটা কমানো সম্ভব হবে।
মো. আবদুর রহমান খান বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে রেভিনিউ সৈনিক যারা, তাদেরকে আন্ডারমাইন্ড করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যত জায়গায় আমরা আলোচনা করি, যত কথা বলি, তার সারসংক্ষেপ হলো– রেভিনিউ না বাড়াতে পারলে আমাদের এই দুরবস্থা থেকে বের হওয়া যাবে না। রেভিনিউর দিক থেকে আমরা আসলে অনেক পেছনে আছি। যদিও আমরা অনেক কথা বলি যে জিডিপি ক্যালকুলেশনে ভুল আছে কি না, আমরা এত এত অব্যাহতি দেই, সেগুলো তো অবশ্যই কারণ। বড় কারণ হচ্ছে– আমাদের কমপ্লায়েন্স লেবেল খুবই পুওর। এ জায়গায় আমাদের রেভিনিউ সৈনিকদের প্রচুর কাজ করার আছে।
উদাহরণ দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি আমরা সব কর অঞ্চলে একটি নির্দেশনা জারি করেছি যে কীভাবে প্রতিটি জোনে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যায়। আমরা দেখেছি, যে পরিমাণ গোয়েন্দা কাজ করা প্রয়োজন, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল ও আয়কর গোয়েন্দা সে পরিমাণ গোয়েন্দা কাজ করতে সমর্থ না। সেজন্য আমরা বলেছি, প্রত্যেকটি জোনে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম করতে হবে।
রিটার্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা যখন হিসাব চাই, তখন বলি এত লোক ট্যাক্সপেয়ার নাই। নানা কারণে এদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে আমরা তাদের ডি-রেজিস্ট্রেশন কেন করছি না। ডি-রেজিস্ট্রেশন করা আমাদের জন্য ফরজ হয়ে গেছে। আমরা যখন বলি, আমার টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ, আর আমার রিটার্ন আসে ৪৫ লাখ, এটা অগ্রহণযোগ্য। হয়ত টিআইএনধারীদেরকে ডি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, যাদের পাওয়া যাচ্ছে না। না হয় তাদেরকে নোটিশ করে বলতে হবে আপনি কেন রিটার্ন দিচ্ছেন না।
আপনার মতামত লিখুন : :