ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম ১নং তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদ। ৩,৩৩৬ একর বা ১৩.৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের তেজখালি ইউনিয়নের গ্রামগুলো হলো আকনগর, জয়নগর, ইমামনগর, বিষ্ণুরামপুর, গোটকান্দি, হরিনগর, বারাইলচর, তেজখালি ও হাসন্নগর। বর্তমানে এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল হক বাবুল ওরফে বাবুল নানা।
ইতোপূর্বে এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ফজলুল হক দুদু মিয়া, উপনির্বাচনে গাজী মদন, ডাক্তার সামসুজ্জামান খাঁন, মোহাম্মদ আলী আকবর, আবুল হোসাইন, কাজী আব্দুল কাদের, মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, গাজী ফাইজুর রহমান ফাজিল, ডাক্তার তাজুল ইসলাম।
অভিযোগ রয়েছে বিগত সময়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে সাবেক চেয়ারম্যান গাজী ফাইজুর রহমান ফাজিলকে জোরপূর্বক হারিয়ে নৌকা মার্কা প্রতীকে শহীদুল হক বাবুলকে বিজয়ী করেছিলেন সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। ওই সময় তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে পুরো উপজেলায় আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম হয়েছিল।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে অপার সম্ভাবনাময় ইউনিয়ন তেজখালী। এই ইউনিয়নে দেশবরেণ্য অগণিত কৃতি সন্তানের জন্ম হয়েছে। এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন সাবেক এমপি এম এ খালেক পিএসসি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব, বর্তমানে দুদকের চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আবদুল মোমেন, প্রফেসর নাসিরউদ্দিন, সাবেক সচিব গাজী শহীদুল্লাহর মতো গুণীজনেরা।
নানা কারণেই তেজখালী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন হিসেবে বিবেচিত। অথচ গত কয়েক বছর যাবত এই ইউনিয়ন পরিষদ ভোগান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হক বাবুল আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর সেবা কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। বিশেষ করে ওয়ারিশ সনদ, জন্ম ও মৃত্যুসনদসহ সংশোধিত জন্মনিবন্ধন পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে। যদিও এই ইউনিয়নে বর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আমিরুল ইসলাম নয়ন।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা এবং ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হক বাবুলের বিশ্বস্ত হওয়ার কারণে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমিরুল ইসলামকে। আর সেই কারণে তিনিও ঠিকমতো পরিষদে আসেন না। ফলে আসল উদ্দেশ্য সেবাকার্যক্রম ব্যাহত। সবকিছু মিলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও ইউনিয়নের প্রায় সব সদস্যই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। হামলা মামলা ও শারিরিক নির্যাতনের ভয়ে সদস্যদের অনেকেও ঠিকমতো পরিষদে আসেন না। এতে করে জরুরি দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ইতোমধ্যে গত বুধবার (৯ জুলাই) ইউপি সচিব নিয়ামুল হককে তেজখালী ইউনিয়ন থেকে নবীনগরের নাটঘর ইউনিয়নে বদলী করা হয়েছে। পাশাপাশি লাউরফতেহপুর ইউনিয়নে তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেয়া হয়েছে। এদিকে পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের রবিউল্লাহকে তেজখালী ইউনিয়নে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদ ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নের উদ্যোক্তা আরাফাতের নামেও নানা অভিযোগ রয়েছে।
কথা হয় তেজখালী ইউনিয়নে অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া মো. রবিউল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, আমি এখনও যোগদান করিনি। আগামীকাল সোমবার (১৪ জুলাই) যোগদান করবো। যোগদানের পর তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদে কোন অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি হতে দেব না। জনগণের সেবা নিশ্চিতে শতভাগ আন্তরিকতার সাথে কাজ করবো।
স্থানীয়রা বলছেন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আওয়ামীপন্থি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক বাবুল ও তার অনুসারী বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যরা নানা অপকর্ম করেছে। এখন তারা জনরোষে পড়ার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন কিন্তু সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রশাসনের কাছে দাবি, জনগণের সেবা নিশ্চিতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম নয়নকে নিয়োগে দিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর নানাবিধ অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। সেই কারণে এলাকাবাসীর দাবি তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদে যেন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন : :