চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি তিন বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। সংযোগ সড়ক না থাকায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। ফলে স্থানীয়দের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে নদী পারাপার হতে হয়। সেইসঙ্গে চালকদের অতিরিক্ত ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হয়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার কথা বলেছেন চুয়াডাঙ্গা এলজিইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এ ব্যয় ধরা হয় ছয় কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকা। সেতুটি চালুর কথা ছিল ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করেন।
এরপর পাঁচ বছর কেটে গেছে কিন্তু সেতুটি আর চালু করা হয়নি। জমি অধিগ্রহণ না করে সেতু নির্মাণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা সেতুটিতে এলাকাবাসী ওঠেন মই দিয়ে। সেতুর ওপরে কৃষিপণ্য শুকোতেও দেখা যায়। জমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার এবং সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে সেতু চালু হতে আরও বেগ পেতে হবে বলে শঙ্কা বাসিন্দাদের।
হাটকালুগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস আলীর চাষাবাদ নদী এলাকার পীরপুর গ্রামে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে এবং কৃষক ও ব্যবসায়ীদের চাষাবাদ এবং পীরপুর-গঞ্জেরঘাট এলাকা দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী পারাপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে এলাকাবাসীর দাবি পূরণ হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। সেতুটি চালু হলে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এখন যানবাহন নিয়ে ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়, সেই দুর্ভোগ লাঘব হবে।
আব্বাস আলী বলেন, নদীর এপাড়ে আমার বাড়ি। চাষাবাদ নদীর ওপারে। প্রতিদিন বেশ কয়েকবার আমাকে নদী পার হতে হয়। প্রতিবার পারাপারে ১০ টাকা দিতে হয়। সেতু চালু হলে আমার এই খরচটি বেচে যেত।
পীরপুর গ্রামের কৃষক নবিছদ্দিন বলেন, শহরে যেতে হলে আমাদের নৌকায় নদী পার হয়ে যেতে হয়। তা না হলে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে বড়বাজার সেতু হয়ে শহরে যেতে হয়। সেতু দিয়ে নদী পার হলে, তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বাজার, কোর্ট ও হাসপাতালে যেতে পারি। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। বছরের পর বছর অপেক্ষা করছি।
সদর উপজেলার হাটকালুগঞ্জ গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণের শুরুতেই ভুল হয়েছে। সেতুর জন্য স্থান নির্বাচন সঠিক হয়নি। আগে থেকে এ পথে মানুষ নৌকায় পারাপার হয়। সেখানে হেঁটে চলা পথ তৈরি ছিল। ৫০ মিটার দূরে সরিয়ে সেতুটি করা হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে জানিয়ে সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, জমির মালিকদের আংশিক টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। খুব শিগগির নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে বাকি কাজ শেষ করে সেতুটি চালু করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন : :