• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
সোনারামপুর ইউনিয়নে বিতর্কের ঝড়: জনমনে ক্ষোভ

বাঞ্ছারামপুরে নয়ন হত্যা মামলার আসামীর স্ত্রী চেয়ারম্যান!


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম বাঞ্ছারামপুরে নয়ন হত্যা মামলার আসামীর স্ত্রী চেয়ারম্যান!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্যানেল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন শাহেনা বেগম। যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, স্বামীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে তিনি এখন ইউনিয়নজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।  
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন: শাহেনা বেগমের আগে সোনারামপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) ছিলেন রেনোয়ারা বেগম। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত নির্বাচনে রাত ৯টার দিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সোনারামপুর বাজার কেন্দ্রের ফলাফল পাল্টে দেয়া হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রেনোয়ারা বেগম পরাজিত হন। অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে শাহেনা বেগমকে সহায়তা করেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন মিয়া। নির্বাচনের ওই সময় রেনোয়ারা বেগম ও তার স্বামী মজিবুর রহমান একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েন। 
যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন: স্থানীয়দের দাবি, শাহেনা বেগমের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, কাবিখা-টিআর প্রকল্প, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এছাড়া মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় পুরো ইউনিয়নের চিত্র উপস্থাপন করা চেয়ারম্যানের অন্যতম দায়িত্ব। অপ্রাতিষ্ঠানিক একজন ব্যক্তির পক্ষে এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া চেয়ারম্যান প্যানেল ১ কালন মেম্বার ও ২ মনির মেম্বারকে বাদ দিয়ে ৩ নম্বরে থাকা শাহেনা বেগমকে চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচিত করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, চেয়ারম্যান প্যানেল ১ এ থাকা কালন মেম্বারকে হুমকিও দেয়া হয়। পরে জীবন বাঁচাতে তিনি মালদ্বীপ চলে যান। 
ছগির বাহিনী: বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উত্তরাঞ্চলের ছগির বাহিনীর প্রধান মো. ছগির মিয়া। তিনি সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্যানেল শাহেনা বেগমের স্বামী। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আলোচিত ছাত্রদল নেতা নয়ন হত্যা মামলার ১৯ নং আসামী। ওই মামলায় স্থানীয় সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম জেল খাটছেন। অথচ একই মামলার আসামী ছগির মিয়া এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে এলাকায় ছগির বাহিনীর জবরদখল বেড়েই চলছে। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে ছগির বাহিনী সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া জালু মাস্টারের সোনারামপুর বাজারের আড়াই শতক জায়গা দখল করে নেন। পরে ৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন জালু মাস্টারের ছেলে নূর মোহাম্মদ ভুঁইয়া। ওই জায়গাটি নিয়ে কোর্ট থেকে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করা হয়েছে। 
নিহত নয়নের স্বজনদের ক্ষোভ: বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ সভাপতি নয়ন মিয়া। তিনি সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের রহমত উল্লাহ ছেলে। ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার মোল্লাবাড়ি স্টিল ব্রীজের কাছে গুলিতে নিহত হন নয়ন মিয়া। ওই মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন স্থানীয় সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। অথচ দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একই মামলার ১৯ নং আসামী, চেয়ারম্যান প্যানেল শাহেনার স্বামী ছগির মিয়া। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহত নয়নের স্বজনরা বলেন, হত্যা মামলার আসামির স্ত্রী আজ চেয়ারম্যান প্যানেল-এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান প্যানেল হওয়ার পর শাহেনা বেগম ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভীতিকর আচরণ করছেন এবং তাদের পরামর্শ ব্যতিত একক ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বেচ্ছাচারিতা প্রয়োগ করছেন। 
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ: বাঞ্ছারামপুরের সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম ও তারই ভাগিনা উজানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী জাদিদ আল রহমান জনির সাথে শাহিন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে তোলেন শাহেনার স্বামী ছগির মিয়া। তারপরই রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় শাহেনা পরিবারের। ভোট কারচুপির মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করেন তিনি। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, শাহেনা বেগম বরাদ্দকৃত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। এমনকি জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া শাহেনা বেগমের স্বামী ছগির মিয়া দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান শাহিন মিয়ার সহযোগিতায় এলাকায় বিচার-শালিশ, মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের উত্তোলনকৃত ট্যাক্সের টাকা আত্মসাৎ, টাকার বিনিময়ে ভিডব্লিউবি কার্ড ও মা-শিশু সহায়তা কার্ড বিতরণসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তিনি অবৈধ টাকার মালিক বনে গেছেন। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
গ্রামবাসীর ক্ষোভ: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাহিন চেয়ারম্যানকে সরানো হলে আমরা ভেবেছিলাম ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এবার নাগরিক সেবা সহজেই পাবো। কিন্তু শাহেনা বেগম প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। বরং শাহেনা ও তার স্বামীর ভয়ে আমরা তটস্থ থাকি প্রতিনিয়ত।
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ: সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্যানেল শাহেনা বেগম ও তার স্বামী নয়ন হত্যা মামলার আসামী ছগির মিয়ার ব্যাপারে সঠিক তদন্তের দাবি জানান এলাকাবাসী। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক, উপ পরিচালক স্থানীয় সরকারি বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পুলিশ সুপার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

Side banner