শরীয়তপুর থেকে মারামারিতে আহত ভাইকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন নাজমুল। ভাইকে প্রাণে বাঁচাতে নার্সদের কথায় সুতাসহ কিনে আনেন একের পর চিকিৎসার সরঞ্জাম। এমনকি সরকারি হাসপাতালে সরকারি সুতা মজুত থাকার পরও তাকে দিয়ে তিন দফায় বাইরে থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকার সুতাসহ সরঞ্জাম কেনানো হয়। কিন্তু, বিস্ময়করভাবে কেনা সুতা দিয়ে নয় বরং সরকারি সুতা দিয়েই সেলাই করা হয় আহত বুলুকে।
সিনিয়র স্টাফ নার্স রাকিবুল হাসান ও নাঈম ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা এমন প্রতারণার অভিযোগে এখন হাসপাতালজুড়ে চলছে আলোচনা। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী রোগী বুলুর স্বজন নাজমুল জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে একটি মারামারির ঘটনায় ভাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তিনি। জরুরি বিভাগের ৪ নম্বর রুমের অপারেশন থিয়েটার থেকে তাদের স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে তিনি সুতাসহ ২৪০০ টাকার মেডিসিন কেনেন। এরপর আবার সুতা কেনার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দিলে সেখানে ১৭৫০ টাকার সুতা কেনেন। এরপর আবারও তাকে একটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হলে ১০৫০ টাকার সুতা কেনেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জরুরি বিভাগের ৪ নম্বর রুমের ব্রাদার রাকিবুল হাসান ও নাঈম ইসলাম তাকে দিয়ে তিন দফায় ৫২০০ টাকার সুতাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনালেও সেই সুতা দিয়ে তার ভাইকে সেলাই করা হয়নি।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাকিবুল হাসান জানান, সেদিন আমার ডিউটি ছিল। কিন্তু বিষয়টি আমার স্মরণে নেই। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
অপর অভিযুক্ত নার্স নাঈম ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, আমি এখন ঢাকার বাইরে আছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা ডিউটি করেছি ঠিক আছে। তবে এই ঘটনা আমার মনে পড়ছে না। যদি করে থাকি, তাহলে ক্ষমা চাচ্ছি। এবারের মতো ক্ষমা করে দেন, পরবর্তী সময়ে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না।
ভুক্তভোগী ওই রোগীর স্বজন নাজমুল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মারামারির ঘটনায় শরীয়তপুর থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। সুতা কেনার টাকা ছিল না। পরে হাসপাতালের বাইরে ডিএস ফার্মেসিতে মোবাইল জমা রেখে সুতা কিনি। পরবর্তী সময়ে বিকাশে টাকা এনে ওই মোবাইল ছাড়িয়ে নিই।
তিনি আরও জানান, পরে চিকিৎসক তার ভাই বুলুকে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তারা চলে যান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সেবা তত্ত্বাবধায়ক সাহানা আবেদীন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের সতর্ক করেছি।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডাক্তার মো. মোস্তাক জানান, বিষয়টি জেনেছি এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সেই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন : :