• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
লাইসেন্স বাতিলের দাবি

বাঞ্ছারামপুরে সার ডিলার-ব্যবসায়ীচক্রে জিম্মি কৃষক


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার অক্টোবর ২, ২০২৫, ১০:৫১ এএম বাঞ্ছারামপুরে সার ডিলার-ব্যবসায়ীচক্রে জিম্মি কৃষক

গত মৌসুমের পর কিছুদিনের বিরতি দিয়ে চলতি আউশ মৌসুমেও তীব্র হয়েছে সারসংকট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়ার তিন ধরনের সার সরকারি ডিলার পয়েন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। অথচ এসব সারই খুচরা পর্যায়ের ডিলারদের কাছে মিলছে অধিক দামে। কৃষকদের অভিযোগ, যেই সার সরকারি মূল্যে ডিলারদের থেকে পাওয়ার কথা, সেটি পাচ্ছি না। অথচ গ্রামগঞ্জের খুচরা দোকানে সারের অভাব নেই। কিন্তু খুচরা দোকানিদের কাছ থেকে সার কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে দুই-তিন গুণ বেশি দাম। এখানে বিশাল একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাদের চক্রের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বেশিরভাগ সারের ডিলার বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সারের কৃত্তিম সংকট তৈরি করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেছে, তাদের এসব কর্মে সহযোগিতা করেছে উপজেলা কৃষি অফিস-এমন অভিযোগ রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া সার গোডাউনে না উঠিয়ে ডিলাররা অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ আমলের এসব দুর্নীতিবাজ ডিলারদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনেকেই তাদের ভোল্ট পাল্টে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন। সরকারি মূল্যের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা অধিক মূল্যে সার বিক্রি করছে ডিলার ও সাব ডিলাররা। ইউরিয়াও ডিএসপি সাতাশ টাকা সরকারী মূল্য হলেও বিক্রি করছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা পর্যন্ত, ডেব ২১ ওএমওপি ২০ টাকা সরকারি মূল্য হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা। 
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত মনিটরিং এর কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। গোডাউনে সার মজুদ ঠিক করেছে কিনা এই বিষয়গুলোও দেখভাল না করে ডিলারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। 
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চলতি আউশ মৌসুমে উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ধানের বীজতলা, পাট, পেঁপে, আগাম শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে কৃষকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। এই সময়ে প্রয়োজন হয় ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের। সারের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মিলছে না এক ছটাকও। মাঝেমধ্যে সরকার অনুমোদিত ডিলারের কাছ থেকে নামমাত্র সার মিললেও তা দিয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম চালানো আরও কঠিন। এমন কৃত্রিম সংকটে দিশেহারা চাষিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কৃষকক বলেন, ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে ডিলারের ঘর থেকে প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ১০ কেজি করে সার পাওয়া যাচ্ছে। অথচ আমার প্রয়োজন ৩০ কেজি করে। মোট ছয় বিঘা জমিতে আমার যে পরিমাণ সার লাগবে তার ছিটেফোঁটাও মিলছে না।
আরেক কৃষক বলেন, সারের জন্য ডিলারদের কাছে গেলে সার নেই বলে জানানো হয়। তবে খুচরা দোকানে সারের অভাব নেই। কিন্তু সেই সারের দাম অনেক বেশি। যেই সারের সরকারি দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা বস্তা তা খুচরা দোকানে দুই হাজার ৩০০ টাকা। এরপরও বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে। পরে এ ব্যাপারে কৃষি অফিসে অভিযোগ দিলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক মোঙ্গল মিয়া বলেন, সারের সংকট আগেও ছিল, এখনও আছে। মৌসুম শুরুর আগেই এমন সারের সংকট দেখা দেয়। এটি হয় সিন্ডিকেটের কারণে।
একটি বিশেষ সূত্র থেকে জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিসিআইসি ও বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলাররা বছরের পর বছর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের জিম্মি করে রেখেছে। ফলে কৃষকরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আর সেই কারণেই বেশকিছু ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের দাবি উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিএডিসি সার ডিলারদের মধ্যে মেসার্স মোখলেছ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সেন্টু মিয়া ট্রেডার্স, মেসার্স রিয়াজুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স পিংকি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলী এন্ড কোং, মেসার্স ফারুক ট্রেডার্স সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে। অন্যদিকে বিসিআইসি সার ডিলারদের মধ্যে মেসার্স রাজিব ট্রেডার্স, মেসার্স জসিমউদ্দিন, মেসার্স পলি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সুজন ট্রেডার্স, মেসার্স ফারুক ট্রেডার্স, মেসার্স মহসিন এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আ. মোতালিব, মেসার্স তিতাস এন্টারপ্রাইজের নামেও নানা অভিযোগ উঠেছে। 
একইভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে খুচরা সার ডিলারের মধ্যে বিষ্ণুরামপুর বাজারের এরশাদ মিয়া, আকানগরের আ. আজিজ, জয়কালিপুরের আমান উল্লাহ, পাহাড়িয়াকান্দির মেন্টু মিয়া, দরিয়াদৌলতের সফিকুল ইসলাম, কদমতলির আমজাদ হোসেন, মরিচাকান্দির বিল্লাল মিয়া, কালাইনগরের হুমায়ুন কবির, সোনারামপুরের ইসলাম ভুঁইয়া, ছয়ফুল্লাকান্দির মজনু মিয়া, দড়িগাঁওয়ের কামরুজ্জামান, বাহাদুরপুরের খলিলুর রহমান, ইমামনগরের আলী আশরাফ, জীবনগঞ্জের জামান মিয়া, খাল্লার আবদুল মতিন, গকুলনগরের তাজুল ইসলাম, মাছিমনগরের রকিবুল ইসলাম, দড়িভেলানগরের জাকির হোসেন, ফরদাবাদের আমির হোসেন, রূপসদীর ছিদ্দিকুর রহমান, নায়েব আলী, খাউরপুরের রশিদ মিয়া, হোগলাকান্দির রাসেল মিয়া, ছলিমাবাদের আবদুস সালাম, তাতুয়াকান্দির হোসেন মিয়া, ভুরভুরিয়ার ফরিদ মিয়া, কালিকাপুরের মোক্তার হোসেন, মানিকপুরের আবুল কাশেম, কল্যাণপুরের নাসিরউদ্দিন ও বাহেরচরের মাইনউদ্দিনের নামে বেশি দামে সার বিক্রীর অভিযোগ উঠেছে। 
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা এসব সার ডিলারদের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান। একই সাথে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি অফিস, ইউএনও, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
উল্লেখ্য, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বিসিআইসি সার ডিলারের লাইসেন্স ১৪টি, বিএডিসি লাইসেন্স ১১টি, খুচরা বিক্রেতা ৭১ জন এবং পুরো উপজেলায় আবাদী জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৬শত ৬ হেক্টর। 

Side banner

কৃষি এর আরও খবর