পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। প্রতিটিতেই ছিল উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এর মাঝে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে জিতেছে ভারত। ৫ উইকেট নিয়ে শুভমান গিলের দলের জয়ের অন্যতম নায়ক মোহাম্মদ সিরাজ। এই এক টেস্টেই হয়েছে একগুচ্ছ রেকর্ড। একনজরে দেখে নিন ওভালে দুই দলের লড়াইয়ে কী কী রেকর্ড হয়েছে-
১) রানের দিক থেকে সবচেয়ে কম ব্যবধানে টেস্ট জিতেছে ভারত। এর আগে ২০০৪ সালে মুম্বাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩ রানে টেস্ট জিতেছিল তারা।
২) বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০০০ রান করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন জো রুট।
৩) প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে তৃতীয়বার ৫০০ বা তার বেশি রান করলেন রুট। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দুইবার ৫০০ বা তার বেশি রান করেছেন এভারটন উইকস, গ্যারি সোবার্স, জহির আব্বাস, রিকি পন্টিং এবং ইউনিস খান।
৪) প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ঘরের মাঠে ২৪টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন রুট। ঘরের মাঠে ২৩টি করে টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে পন্টিং, জ্যাক কালিস এবং মাহেলা জয়বর্ধনের।
৫) ডন ব্র্যাডম্যানের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ঘরের মাঠে একটি দলের বিরুদ্ধে টেস্টে ২০০০ রান করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন রুট। ব্র্যাডম্যান ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৮ টেস্টে ২৩৫৪ রান করেছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ২০ টেস্টে রুটের রান ২১১১।
৬) ইংল্যান্ডের প্রথম ব্যাটার হিসেবে একটি দেশের বিরুদ্ধে ১৩টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন রুট। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১২টি টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার জ্যাক হবসের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯টি সেঞ্চুরি রয়েছে ব্র্যাডম্যানের। তাদের পরই আছেন রুট।
৭) ইংল্যান্ডের মাটিতে ৮৪ টেস্টে রুটের রান ৭৩২৯। তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। দেশের মাটিতে টেন্ডুলকারের টেস্ট রান ৭১২৬। রুটের আগে রয়েছেন পন্টিং। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে ৭৫৭৮ রান করেছেন। রুট এই তালিকায় এখন দ্বিতীয় স্থানে।
৮) ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার একটি টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড ছিল গ্রাহাম গুচের। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ১৯৯০ সালের সিরিজে করেছিলেন ৭৫২ রান। তার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন শুভমান গিল। তিনি এই সিরিজে ৭৫৪ রান করেছেন।
৯) ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে একটি টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন গিল। তিনি ভেঙেছেন সুনীল গাভাস্কারের রেকর্ড। ১৯৭৮-৭৯ মরসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে ৭৩২ রান করেছিলেন গাভাস্কার।
১০) রবীন্দ্র জাদেজা ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রান করেছেন। পাঁচ টেস্টের সিরিজে ছয় ইনিংসে জাদেজা ৫০ বা তার বেশি রান করেছেন। ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে এই রেকর্ড আর কারও নেই।
১১) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দল মোট ৩৮০৯ রান করেছে। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এত রান করার কৃতিত্ব আর কোনো দলের নেই। ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩৮৭৭ রান করেছিল। সেই সিরিজে ছয়টি টেস্ট হয়েছিল।
১২) এই প্রথম কোনো টেস্ট সিরিজে ভারতের তিনজন ব্যাটার ৫০০ বা তার বেশি রান করলেন। গিল, জাদেজা এবং লোকেশ রাহুল এই রেকর্ড গড়েছেন।
১৩) ওভাল টেস্টের প্রথম ইনিংসে সিরাজ ৪ উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। টেস্ট ফরম্যাটে এশিয়ার প্রথম বোলার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে অন্তত চার জন ইংলিশ ব্যাটারকে সাতবার করে আউট করলেন তিনি।
১৪) ওভাল টেস্টে বেন ডাকেট এবং জ্যাক ক্রলি প্রথম উইকেট জুটিতে দু’ইনিংসে ৯২ এবং ৫০ রান করেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে তাদের ওপেনিং জুটি মোট নয়বার ৫০ বা তার বেশি রান করল। এতে নতুন রেকর্ড গড়েছেন তারা। আগের রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হেইনস এবং গর্ডন গ্রিনিজের। তারা ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে ওপেনিং জুটিতে আটবার ৫০ বা তার বেশি রান করেছিলেন।
১৫) ডাকেট-ক্রলি বিশ্বের দ্বিতীয় ওপেনিং জুটি হিসেবে টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে ১০০০ রান করলেন। এই কৃতিত্ব এত দিন ছিল কেবল হেইনস-গ্রিনিজ জুটির।
১৬) নৈশপ্রহরী হিসাবে ব্যাট করতে নেমে ওভালে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন আকাশদীপ। ভারতের টেস্ট ইতিহাসে আকাশদীপ তৃতীয় নৈশপ্রহরী হিসেবে ফিফটি করেছেন। ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সৈয়দ কিরমানি ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। এ ছাড়া অমিত মিশ্র ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৫০ এবং ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন।
১৭) এই প্রথম কোনো দেশ টেস্টে ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করতে নেমে ১০ রানের কম ব্যবধানে হারল। এর আগে এমন ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রানে হারের রেকর্ডও ইংল্যান্ডের। ১৯২৫ সালে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭৫ রান তাড়া করতে নেমে ১১ রানে হেরেছিল ইংরেজরা।
১৮) ওভালের দ্বিতীয় ইনিংসে জ্যাকব বেথেল আউট হওয়ায় সময় ইংল্যান্ড জয় থেকে ৪২ রান দূরে ছিল। পঞ্চম ব্যাটার হিসাবে আউট হন বেথেল। অর্থাৎ জয়ের লক্ষ্য থেকে ৫০ রানেরও কম দূরত্বে থাকা অবস্থায় ৬ উইকেট পড়েছে ইংল্যান্ডের। এর আগে কখনও টেস্টে জয়ের লক্ষ্য থেকে ৫০ বা তার কম রানের দূরত্বে থেকে ৬ বা তার বেশি উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড।
১৯) ওভাল টেস্টে এলবিডব্লিউ আউট হয়েছে ১২টা। লন্ডনের এই মাঠে কোনো টেস্টে এর চাইতে বেশি এলবিডব্লিউ আউট হয়েছে আর একবারই। ২০০০ সালে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে এলবিডব্লিউ আউটের সংখ্যা ছিল ১৪।
২০) সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে রুটের সেঞ্চুরি সংখ্যা এখন ১৬। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথের নজির স্পর্শ করলেন তিনি। একটি দেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার ক্ষেত্রে তাদের আগে রয়েছেন কেবল ব্র্যাডম্যান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার সেঞ্চুরি সংখ্যা ১৯টি।
২১) ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের পাঁচটি টেস্টের ফলাফলই নির্ধারণ হয়েছে পঞ্চম দিনে। ২০০০ সালের পর যা দেখা গেছে চতুর্থবার। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৪-০৫ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও পাঁচটি টেস্টের ফল এসেছে পঞ্চম দিনে।
আপনার মতামত লিখুন : :