বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ঐতিহাসিক ব্রিটিশ আমলের নীলকুঠির স্থানে গড়ে ওঠা হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আজ অবহেলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পলেস্তরা খসে পড়ছে, দেয়ালে দেখা দিয়েছে বড় ফাটল, ছাদ থেকে ঝরে পড়ছে সিমেন্টের গুঁড়ো। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনটির এ বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে প্রতিদিনই আতঙ্ক নিয়ে পাঠদানে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ভবনের অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
১০ম শ্রেণির ছাত্রী কাজী তানহা বলেন, কয়েকদিন আগে ক্লাসে বসে থাকা অবস্থায় ছাদের পলেস্তরা মাথায় পড়ে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। তারপরও বিকল্প না থাকায় এই ভবনেই ক্লাস করতে হচ্ছে।
অস্টম শ্রেণির মারিয়া আক্তার, নবম শ্রেণির আবু তালহা এবং সপ্তম শ্রেণির রাফিয়া ইসলাম জানান, এই স্কুলটা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত ছিল এটাকে রক্ষণাবেক্ষণের অগ্রাধিকার দেওয়া। কিন্তু আজ আমরা ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মোহলী জানান, বিদ্যালয়ে ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১১টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও পাঠদানের উপযুক্ত মাত্র তিনটি কক্ষ আছে। ২০১৯ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও এখনো বিকল্প কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি। প্রতিদিনই পলেস্তরা খসে পড়ছে, দেয়ালে ফাটল বাড়ছে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জেহাদুল ইসলাম বলেন, ৬০ বছরের পুরনো এই স্কুলটি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। এটি শুধুই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, ব্রিটিশ আমলের নীল চাষীদেরও স্মারক। অথচ আজও অবহেলায় ধ্বংসপ্রায় ভবনে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজার প্রদীপ কুমার ভৌমিক বলেন, হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস পাল জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন : :