• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

বাঘাইছড়িতে চিকিৎসার অভাবে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নোমাইনুল ইসলাম সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম বাঘাইছড়িতে চিকিৎসার অভাবে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় চিকিৎসার সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে ২৭ বছর বয়সী সান্ত্বনা চাকমার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। মারিশ্যা পাকোয়াখালী গ্রামের এই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত দুঃখ নয়, এটি পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য সংকটের এক মর্মান্তিক প্রতিচ্ছবি।
আজ সকালেই প্রসব বেদনা শুরু হলে সান্ত্বনা চাকমাকে স্থানীয় বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় প্রসূতি চিকিৎসক ও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধার অভাবে তাকে দ্রুত খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। 
দুর্ভাগ্যবশত, দীর্ঘ ২ থেকে ৩ ঘণ্টার দূরত্ব পাড়ি দিতে গিয়ে গাড়ির মধ্যে সন্তান জন্ম দেন তিনি। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই সংকটাপন্ন হয়। হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই তার প্রাণহানি ঘটে।
বাঘাইছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত চিকিৎসক পদ থাকলেও অধিকাংশই শূন্য। যারা কর্মরত আছেন, তারাও অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে দক্ষ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসা, প্রসূতি সেবা, শিশু ও হৃদরোগের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুপস্থিত। এর ফলে জরুরি অবস্থায় রোগী ও প্রসূতিদের সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালে আধুনিক ল্যাব, আইসিইউ নেই। বেসিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ওষুধের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত ও দ্রুতগামী অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে রোগী দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হচ্ছে।
বাঘাইছড়ি পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। যদিও স্থল ও নৌপথে যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে, সড়ক ও পরিবহন দুর্বলতার কারণে জরুরি রোগীকে দ্রুত জেলা সদর বা বৃহত্তর শহরে পাঠানো কঠিন। এর ফলে চিকিৎসার দিক থেকে সময়ের অপচয় হয়, যা প্রাণহানির কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো কার্যত অকার্যকর। কর্মী ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে না। এর প্রভাব পড়ে গরীব, অসচ্ছল ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ওপর।
দূর্গম অঞ্চলের গরিব মানুষ চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেন না। সাধারণ সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপারেশনের জন্য তাদের খাগড়াছড়ি বা চট্টগ্রামে যেতে হয়। যাতায়াতের ব্যয়, সময় ও ঝুঁকি তাদের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি মায়ের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের বড় দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবার অভাবে এখানে এটি কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের দাবী, তাৎক্ষণিকভাবে প্রসূতি, শিশু, হৃদরোগ ও জরুরি চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ ও পদায়ন করতে হবে। আধুনিক ল্যাব, আইসিইউ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। দূর্গম অঞ্চলের জন্য দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং অবকাঠামো উন্নত করতে হবে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত কর্মী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্য এলাকায় আঞ্চলিক মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে, যাতে স্থানীয় রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পেতে পারেন।
সান্ত্বনা চাকমার মৃত্যু পার্বত্য অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের সংকট ও অবহেলার এক করুণ চিত্র। চিকিৎসা, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে গর্ভবতী মায়ের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। যদি এই সমস্যাগুলো সমাধান না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হবেন। তাই এখনই প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতকরণ, দুর্যোগপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ।

Side banner