চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। পর্যটকের পদচারণায় প্রায় সব ঋতুতেই মুখরিত থাকে এ জেলা। ৩-৪ দিন সময় হাতে নিয়ে আসলে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব। স্বচ্ছ জল আর পাহাড়ি সবুজে ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে চলে যান রাঙ্গামাটির পথে।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন মানের বাসে করে সরাসরি কাপ্তাই যাওয়া যায়। প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও কাপ্তাই যাওয়া যায়। বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর কাপ্তায়ের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ৮০-১২০ টাকা। সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম এসে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই যাওয়া যায়।
বান্দরবান থেকে কাপ্তাই যেতে চাইলে রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটি গামী বাসে করে গিয়ে বড়ইছড়ি নেমে সিএনজি দিয়ে কাপ্তাই যেতে হবে। রাঙ্গামাটি থেকে সড়ক পথে বাসে কিংবা সিএনজিতে অথবা ট্রলার নৌকায় কাপ্তাই হ্রদ হয়ে কাপ্তাই বাজার যাওয়া যায়।
কাপ্তাই হ্রদ
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলায় পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রায় ৫৪ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত কাপ্তাই হ্রদ। বিভিন্ন মৌসুমে কৃত্রিম এ হ্রদটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নানা রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে।
শুভলং ঝরনা
রাঙ্গামাটির শুভলং ঝরনার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আর অপূর্ব সুরের মূর্ছনা পর্যটকদের বিমোহিত করে। তবে ঝরনার পরিপূর্ণ রূপ দেখতে চাইলে যেতে হবে বর্ষাতেই। শুভলং ঝরনা রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার মধ্যে পড়েছে। কালিট্যাং তুগ এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যার উচ্চতা প্রায় ১ হাজার ৮৭০ ফুট। এই পর্বতশৃঙ্গ থেকে পুরো রাঙ্গামাটি শহর দেখা যায়। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কাপ্তাইয়ের জলে ভেসে থাকা এক টুকরো স্বর্গরাজ্য। সেইসঙ্গে ভারতের মিজোরাম রাজ্যটিও এখান থেকে দৃষ্টিগোচর হয়। তবে শুভলংয়ে কিন্তু স্থলপথে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাপ্তাই হ্রদের ওপর যেতে হবে শুভলং।
ফুরোমন পাহাড়
রাঙ্গামাটি শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ফুরোমন পাহাড়। চাকমা ভাষায় ফুরোমন অর্থ ফুরফুরে মন। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে মন ফুরফুরে হয়ে যায় বলে এর নাম রাখা হয়েছে ফুরোমন। এটির উচ্চতা ১ হাজার ৫১৮ ফুট। ট্রেকিং করে পাহাড়ের চূড়ায় গেলে দেখতে পাওয়া যাবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ।
ঝুলন্ত সেতু
কাপ্তাই হ্রদের ওপর অবস্থিত ঝুলন্ত সেতুটি রাঙ্গামাটির পর্যটনের এক বিশেষ আকর্ষণ। একারণেই সেতুটিকে বলা হয় ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি।’ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সেতুটি নির্মাণ করে। ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ সেতুটির অবস্থান রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার তবলছড়ি এলাকায়। সেতু দেখার জন্য পর্যটকরা স্থলপথ ও জলপথের যে কোনোটি ব্যবহার করতে পারে।
রাজবন বিহার
পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় তীর্থস্থান রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যবাহী রাজবন বিহার। চাকমা ভাষায় বিহার বা মন্দিরকে ‘কিয়াং’ বলা হয়ে থাকে। রাজবন বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধবিহার হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩৩ দশমিক ৫ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত বিহার এলাকায় ৪টি মন্দির, ভিক্ষুদের ভাবনা কেন্দ্র, বেইনঘর, তাবতিংশ স্বর্গ, বিশ্রামাগার ও হাসপাতাল রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন : :