শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শন। এমন মন্তব্য করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সততা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শন আজও সমান প্রাসঙ্গিক। জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি কৃষি, গার্মেন্টস ও মানবসম্পদ উন্নয়নের যে দর্শন তিনি দিয়েছিলেন, তাই আজকের সংকট উত্তরণের মূল চাবিকাঠি।
মেয়র শাহাদাত বলেন, শহীদ জিয়ার নির্দেশিত কৃষি বিপ্লব আমাদের খাদ্য স্বনির্ভরতার পথে নিয়ে গিয়েছিল। যদি আমরা আবারও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে চাই, তবে তার দর্শনে ফিরে গিয়ে কৃষি ও উৎপাদনমুখী অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) চন্দনাইশের হারলা গ্রামে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯৮০ সালে বরুমতি খাল খননের সময় বিশ্রাম নেওয়া ঐতিহাসিক স্মৃতিফলক পুনঃনির্মাণ ও নবনির্মিত বৈঠকখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কৃষি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে সারাদেশে যে খাল খনন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তার অংশ হিসেবেই তিনি চন্দনাইশের হারলা গ্রামের এই বরুমতি খালের উদ্বোধন করেছিলেন। কৃষিকে গণপর্যায়ে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখা এই কর্মসূচি ছিল এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, কালের বিবর্তনে শহীদ জিয়ার স্থাপিত স্মৃতিফলকটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আজ পুনঃনির্মিত এই স্মৃতিফলক ও বৈঠকখানা আমাদের ইতিহাসকে নতুন করে ধারণ করছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া যেই স্থানে বসে খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধন করেছিলেন, ঠিক সেই স্থানে আজ আমরা আবারও তার অবদান স্মরণ করছি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরও বলেন, খাল খনন ও সংস্কার কর্মসূচি শুধু গ্রামীণ উন্নয়নেই নয়, নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে খাল ও নদী দখল, দূষণ, বিশেষ করে পলিথিন ও প্লাস্টিকের স্তর বৃদ্ধি মারাত্মক পরিবেশগত হুমকি তৈরি করছে। কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীর দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়া ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে খাল খনন কর্মসূচি চালু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখা এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে সেচব্যবস্থা নিশ্চিত করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশের মডেল তৈরি করা। এই খাল খনন কর্মসূচিটি চলমান থাকলে বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রতিবছর যে বন্যা দেখা যাচ্ছে তা এতটা প্রকট হতো না।
ডা. শাহাদাত বলেন, খাল খনন কর্মসূচি বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। দেড় বছরে এক হাজার ৫০০টির বেশি খাল খনন ও পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, যা সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছিল।
১৯৭৯-১৯৮১ সালের মধ্যে মোট ২৭৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৬৩৬ মাইল খাল খনন করা হয়। যে খাল খনন কর্মসূচির ফলে ১৯৮০ সালে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এই কর্মসূচি গ্রামীণ স্বনির্ভরতা বাড়াতে সহায়ক ছিল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবার পরিকল্পনা সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. ইদ্রিস মিয়া, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. ইখতিয়ার হোসেন, জসিম উদ্দিন, খন্দকার হেলাল উদ্দিন সিআইপি, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মন্জুর আলম তালুকদার, চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক শহিদুর রহমান খাঁন, বাহাউদ্দীন চৌধুরী, সাইফুল করিম, আরিফুর রহমান মারুফ, চন্দনাইশ পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম শহীদ প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন : :