আমাদের অনেকের সকাল শুরু হয় কফিতে চুমুক দিয়ে। কিন্তু জানেন কি, কফির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে? হঠাৎ শক্তি কমে যাওয়া, ঘুমে ব্যাঘাত, এমনকি হজমের সমস্যাও হতে পারে কফির জন্য। অথচ কফি ছাড়াও সকালের ক্লান্তি দূর করে মন-শরীরকে সতেজ রাখার আছে সহজ কিছু উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ঘুম থেকে উঠে পানি পান করুন
রাতভর ঘুমানোর ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ঝিমঝিম ভাব বা ক্লান্তি লাগে।
কী করবেন?
ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করুন। চাইলে তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিতে পারেন। এতে হজম ভালো হয়, শরীরের টক্সিন বেরিয়ে যায়।
এক চিমটি গোলাপি লবণ দিলে শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
চা-কফি নয়, দিনের শুরু হোক এক গ্লাস পানির মাধ্যমে।
হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা
সকালে একটু নড়াচড়া করলেই রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায় এবং মন-শরীর জেগে ওঠে।
কী করবেন?
ঘুম থেকে উঠে ৫-১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করুন।
‘ডাউনওয়ার্ড ডগ’ বা ‘ক্যাট-কাউ’ যোগের ভঙ্গিমা শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনে।
সকালে ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন, এতে মন ভালো থাকে।
যাঁরা ভারী ব্যায়াম করতে চান না, তাঁরা কিছুক্ষণ গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেও উপকার পাবেন।
রোদে থাকুন
রোদ আমাদের শরীরের ঘড়িকে (সার্কেডিয়ান রিদম) ঠিক রাখে। এতে ঘুমের হরমোন কমে যায়, আর সজাগ রাখার হরমোন বাড়ে।
কী করবেন?
সকাল ১০টার আগেই অন্তত ১০–১৫ মিনিট রোদে থাকুন।
ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে জানালার পর্দা সরিয়ে দিন।
যদি রোদ না মেলে, তবে আলো বিকিরণকারী ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন।
ভিটামিন ডি-এর জন্যও সকালের রোদ অত্যন্ত জরুরি। এটি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
পুষ্টিকর সকালের নাস্তা
সকালে না খেলে বা শুধু মিষ্টিজাতীয় কিছু খেলে দ্রুত শক্তি কমে যায়। তাই দরকার সুষম নাস্তা।
কী খাবেন?
ডিম, গ্রীক দই বা পনির জাতীয় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান।
বাদাম, বীজ বা অ্যাভোকাডো থেকে স্বাস্থ্যকর চর্বি পান।
ওটস, আটার রুটি বা ফলের মতো আঁশযুক্ত খাবার খান—এগুলো ধীরে ধীরে শক্তি ছাড়ে।
সকালের একটি ব্যালান্সড খাবার সারাদিন কর্মক্ষম রাখে।
ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়া বা গোসল
কী করবেন?
পারলে ৩০-৬০ সেকেন্ডের ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন।
না পারলে হালকা গরম ও ঠাণ্ডা পানি পালা করে ব্যবহার করুন।
শুধু মুখে বা কব্জিতে ঠাণ্ডা পানি ছিটালেও মিলবে সতেজতা।
ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শ নার্ভকে জাগিয়ে তোলে, মন ভালো করে।
ধ্যান বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস
গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া বা কিছুক্ষণ ধ্যান করলে মন শান্ত হয়, ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়।
কী করবেন?
‘ডিপ ব্রিদিং’ করুন, ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ৪ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৬ সেকেন্ডে ছাড়ুন।
নাক পাল্টে শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি (নাড়িশোধন) মনোযোগ বাড়ায়।
৫ মিনিটের গাইডেড মেডিটেশন দিন শুরু করার জন্য যথেষ্ট।
মন শান্ত হলে সারাদিন মানসিকভাবে ফুরফুরে লাগবে।
ঘ্রাণে সজাগতা, এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন
পুদিনা বা লেবু জাতীয় তেলের ঘ্রাণ মনকে সতেজ করে, মনোযোগ বাড়ায়।
ঘরে এসেনশিয়াল অয়েল ছড়ান, বিশেষ করে পুদিনা বা সাইট্রাস ঘ্রাণ।
কপাল বা কব্জিতে কয়েক ফোঁটা পুদিনা তেল মেখে রাখুন।
সরাসরি বোতল থেকে শ্বাস নিয়ে ঘ্রাণ নিন।
এসব তেলের প্রাকৃতিক গন্ধ মাথা ঠান্ডা রাখে, মন জাগিয়ে তোলে।
কফি না খেয়েও সকালের ক্লান্তি দূর করা সম্ভব। শুধু এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো নিজের জীবনে আনুন। দিনে ভর থাকবেন প্রাণবন্ত, মন থাকবে চনমনে। সকালটা হোক একটু ভিন্ন, আর জীবনটাও হোক একটু সুন্দর।
আপনার মতামত লিখুন : :