• ঢাকা
  • সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

চামড়ার কাঙ্খিত দাম মেলেনি, বঞ্চিত রইল হতদরিদ্ররা


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৮, ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম চামড়ার কাঙ্খিত দাম মেলেনি, বঞ্চিত রইল হতদরিদ্ররা

অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কিছুটা বেশি হলেও তা সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। রাজধানীতে লবণ ছাড়া বড় এবং মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট এবং মান কিছুটা খারাপ, সেগুলোর দাম ছিল ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ঢাকার বাইরের বাজারে চামড়ার দাম আরও কম।
লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় নির্ধারিত দামের অর্ধেক মূল্যে কেনাবেচা হয়েছে গরুর চামড়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রির টাকা সাধারণত গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হয়। চামড়ার দাম যত কম হয়, ততই এ টাকা থেকে গরিবদের সাহায্য কম পৌঁছায় এবং তারা বঞ্চিত হয়।
চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদে ৮০-৮৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ট্যানারিগুলোর পক্ষ থেকে। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার হারও সন্তোষজনক। এ ছাড়া চামড়ার বাজারও এবার তুলনামূলক ভালো। বিগত কয়েক বছরের মতো এবার চামড়ার মূল্য না পেয়ে নষ্ট করেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলেও দাবি করেন আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা।
যদিও গত কয়েক বছরের মতো এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে তারা ন্যায্য মূল্য পাননি। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এবারের দাম গত বছরের চেয়েও কম ছিল।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে গরু কোরবানি দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম নামের একজন। এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনেছিলেন তিনি। কোরবানির পর এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন।
সাইফুল ইসলাম জানান, ৫০০ টাকার বেশি দিতেই চায় না। এই অর্থ গরিবের হক। তাই কয়েকজনের সঙ্গে দরদাম করে শেষে বিক্রি করলাম তাও মাত্র ৬৫০ টাকা। একটা ছাগলের চামড়া ছিল কেউ কেনেনি, পরে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছি।
আরেক কোরবানিদাতা জানান, ৭-৮ বছর আগে যেই গরুর চামড়া ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা বিক্রি করেছি, এখন তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক দশকে গরুর দাম দ্বিগুণ বাড়লেও চামড়ার দাম কমেছে কয়েকগুণ।
সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম কমলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এবার কোরবানির চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে এক-দুইশ টাকা বাড়লেও কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম।
রবিবার (৮ জুন) ঈদের পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লালবাগের পোস্তা এলাকায় গরুর চামড়া বিক্রি করতে আসেন রজ্জব আলী। তিনি জানান, যে দামে কিনে এনেছি তার চেয়ে ১০০-২০০ টাকা কম বলছে। বড় গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দিয়ে কিনে এনেছি। ১০০ টাকা গাড়ি ভাড়া গেছে। এখানে বলছে ৭০০ টাকা। এখন আমি কি লসে বিক্রি করব?
কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী আড়তদার আবেদ বেপারী জানান, একটা চামড়া ৭০০-৮০০ টাকায় কিনলে এর পেছনে আবার ৩০০-৪০০ টাকা খরচ আছে। লবণ দিতে হবে, কেমিক্যাল খরচ, লেবারের মজুরি, গোডাউন ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বেড়েছে। এগুলো হিসাবনিকাশ করেই চামড়া কিনতে হয়। এটা তো আমাদের আবার বিক্রি করতে হবে।
গতবারের তুলনায় চামড়ার দাম বেশি না কম জানতে চাইলে এই আড়তদার জানান, এবার দাম বেশি। যেসব চামড়া এবার ৮০০ টাকায় কিনছি, গতবার সেটি ৬০০-৬৫০ টাকা ছিল।
এদিকে রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া নিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে চামড়া দিয়ে দিয়েছেন কোরবানিদাতারা। দুই-একজন বিক্রি করতে পারলেও ২০-৫০ টাকার বেশি দাম পাননি।
এবার চামড়ার বাজার অন্য বছরের তুলনায় ভালো বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ।
চামড়ার দাম নিয়ে কিছু ভোক্তার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোরবানির মৌসুমে সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীরাই চামড়া সংগ্রহ করেন। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক কম দামে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এসব কারণে অনেকের মনে হয়েছে তারা ন্যায্য দাম পাননি।
গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাঁচা চামড়া ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে বলে জানান বিটিএ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি আরও জানান, তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। কারণ চামড়া দীর্ঘসময় ধরে রাখা হলে এর মান কমে যায়।
সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, গত কয়েকবারের তুলনায় এবার চামড়ার বাজার বেশ ভালো। আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকার ট্যানারিগুলো আগামী ১০ দিন লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে। এরপর ঢাকার বাইরে থেকে সংগ্রহ শুরু হবে।
চামড়ার বাজার ঠিক রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সারা দেশে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করছে, যাতে এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলো কোরবানির চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পায়। এ ছাড়া সরকার কাঁচা ও ‘ওয়েট ব্লু’ চামড়া রপ্তানির সুযোগও দিয়েছে সরকার।
এবার লবণ মেশানো গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ঢাকায় ট্যানারি ব্যবসায়ীদের লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনতে হবে, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হবে, যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। বকরির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা, যেখানে আগের বছর ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।
ঈদের দিন থেকে টানা ১০ দিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ঢাকায় আনা নিষিদ্ধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ কম। তবে সরকারের প্রত্যাশা, কাঁচা চামড়া রপ্তানিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে আগামীতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়বে।

Side banner