• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

৪৩ বছর পর সরকারি স্কুলের বেদখল জমি উদ্ধার


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১০:২৮ এএম ৪৩ বছর পর সরকারি স্কুলের বেদখল জমি উদ্ধার

প্রায় ৪৩ বছর পর বেদখল হওয়া ২৩ শতাংশ জমি আদালতের মাধ্যমে ফিরে পেয়েছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রশাসনের সহযোগিতায় আদালতের অ্যাডভোকেট কমিশনারের উপস্থিততে বেদখল হওয়া জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দখলকারীর বাধার মুখে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা।
জানা গেছে, রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজার আরএস-২৪৭ যার এস.এ-১৯৯ এবং বি.এস-১০৫৫নং খতিয়ানভুক্ত আরএস ৪২৮ যার বিএস ৭২৯নং দাগের ৭ শতাংশ, আরএস ৪৩০ যার বিএস ৭২৯ দাগের ২ শতাংশ, আরএস ৪৩১ যার বিএস ৭২৯ দাগ এর ৬ শতাংশ ও আরএস ৪৩২ যার বিএস ৭২৯ দাগের ৮ শতাংশ সহ মোট ২৩ শতাংশ জমি ৪৩ বছর ধরে বেদখল করে রেখেছিল আনোয়ার গ্যাং।
১৯৮২ সালে আনোয়ার গ্যাং সরকারকে বিবাদী করে মুন্সেফ আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। যা ১৯৯৪ সালে খারিজ হয়। পরবর্তীতে একই বছরে তিনি মামলার আপিল করেন যা আদালত খারিজ করেন। 
পরবর্তীতে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন যা আদালত ডিসচার্জ করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করেন যা ২০০৯ সালে আবারও খারিজ হয়। ২০০৫ সালে সদর সহকারী জজ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন যা ২০১২ সালে খারিজ হয়। ২০১২ সালে দেওয়ানী আদালতে আপিল করেন যা খারিজ হয়।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে আনোয়ার গ্যাংকে বিবাদী করে খাস দখলের উচ্ছেদের জন্য রাজবাড়ী জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গত ২০২৪ সালের ২৬ মে তারিখে আদালত বিদ্যালয়ের পক্ষে খাস দখলের ডিগ্রি প্রদান করে। অবশেষে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আদালত স্কুলের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সোমবার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
রাজবাড়ী জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট কমিশনার আইনজীবী খায়রুজ্জামান সোহেল বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ জারি মোকদ্দমার মাধ্যমে রায় ডিক্রি লাভ করে কোর্টের মাধ্যমে জারি চেয়েছে। আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এখানে এসেছি জারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে।
আনোয়ার হোসেনের পরিবারের একজন আবুল হোসেন বাবু নামের এক ব্যক্তি বলেন, জেলা স্কুলের সঙ্গে জমি নিয়ে আমাদের কেস চলছিল। আমরা সেই কেসে হেরে যাই। তখন ওই জমিতে থাকা আমদের বাড়ি ঘর ভেঙে আমরা নিয়ে যাই। জেলা স্কুলের বাউন্ডারির বাইরে আমাদের নিজস্ব বাড়িঘর। আমাদের বিল্ডিং এর মধ্যেও তারা যে জায়গা পাবে সেটা আমাদের জানায়নি। আমাদের কোনো নোটিশ না দিয়েই তারা আজ বিল্ডিং ভাঙতে এসেছে। এই বিল্ডিংয়ে ৬/৭ টা পরিবার ভাড়া থাকে, আবার আমরাও থাকি। আমাদেরকে আগে নোটিশ দিলে আমরা সরে যেতাম। ভাড়াটিয়ারাও তাদের মাল পত্র নিয়ে চলে যেত। কিন্তু হঠাৎ করে এসে এভাবে বাড়িঘর ভাঙা একটা অমানবিক কাজ।
রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা সোমবার জেলা স্কুলের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলাম। যারা দখল করে আছে উচ্ছেদ কার্যক্রমের সময় তারা আমাদের বাধা দেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় আমরা নিরাপত্তাজনিত কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করেছি। পূজার ছুটির পর রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হবে।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আনোয়ার গ্যাংয়ের সঙ্গে আমাদের স্কুলের জমি নিয়ে মামলা ছিল। ৪৩ বছর পর সেই মামলার রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। আজ আদালতের নির্দেশে সেই জায়গা উচ্ছেদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদ কার্যক্রম চলাকালে যারা দখল করে রেখেছিল তাদের বাড়ির নারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বের হয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করে। পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী না থাকার কারণে নিরাপত্তা ইস্যুতে উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পূজার পর পুনরায় উচ্ছেদ কার্যক্রম করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৮৯২ সালে গিরিজা শংকর মজুমদার গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত।

Side banner