ইসলামে সপ্তাহের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে জুমার দিন, অর্থাৎ শুক্রবার। এ দিনটি মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ রহমতের দিন। এই দিনে কিছু নির্দিষ্ট আমল রয়েছে, যেগুলোর ফজিলত কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা সেই গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ আলোচনা করবো।
১. জুমার নামাজ আদায় করা
পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত ছুটে চলো এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো।’ (সুরা : আল-জুমুআহ, আয়াত : ৯)
২. গোসল করা, পরিপাটি হওয়া ও সুগন্ধি ব্যবহার
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-
مَنْ غَسَّلَ وَاغْتَسَلَ، ثُمَّ بَكَّرَ وَابْتَكَرَ، وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ، وَدَنَا مِنَ الْإِمَامِ، فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ، كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوهَا أَجْرُ سَنَةٍ صِيَامُهَا وَقِيَامُهَا
‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পরিচ্ছন্নতা গ্রহণ করে, পরিপাটি হয়ে মসজিদে যায়, দুইজনের মাঝে অনধিকার না করে, মনোযোগসহ খুতবা শোনে এবং চুপ থাকে। তবে তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় ‘ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৫৭)
৩. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-
مَن قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة أضاء له من النور ما بين الجمعتين
‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মাঝখানে নূর (আলো) বিচ্ছুরিত হবে।
(সহিহ আল-জামে, হাদিস : ৬৪৭০)
৪. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
হাদিসে এসেছে:
إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة، فيه خلق آدم، وفيه قبض، وفيه النفخة، وفيه الصعقة، فأكثروا علي من الصلاة فيه، فإن صلاتكم معروضة علي
‘তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। নিশ্চয় তোমাদের দরুদ আমার নিকট পেশ করা হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৩১)
৫. দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ে দোয়া করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-
فِي الجُمُعَةِ سَاعَةٌ لا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي، يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا، إِلا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ
‘জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম বান্দা সালাত আদায়রত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণকর বস্তু চাইলে, আল্লাহ তা তাঁকে দান করেন।’ (সহিহ বুখারি, হারিস: ৯৩৫)
৬. বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার ও নফল ইবাদত করা
জুমার দিন হলো গুনাহ মোচনের উত্তম সময়।
এই দিনে বেশি বেশি তওবা করা, ইস্তেগফার করা এবং নফল সালাত ও জিকিরে মগ্ন থাকা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
জুমার দিন মুসলমানদের জন্য এক আলাদা বরকতের দিন। এদিনের সেরা আমল যথাযথভাবে আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং পরকালের জন্য পূণ্যলাভ নিশ্চিত করেন।
আসুন, আমরা সবাই জুমার দিনের এই আমলগুলো গুরুত্বসহকারে পালন করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনের ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দিন।
আমীন।
আপনার মতামত লিখুন : :