• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
এলাকায় আতঙ্ক 

বিতর্কিত শাহেনা হলেন সোনারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্যানেল


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১২:০০ পিএম বিতর্কিত শাহেনা হলেন সোনারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্যানেল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন হলো সোনারামপুর। আয়তনে উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিয়ন এটি। সম্প্রতি এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্যানেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নানাভাবে বিতর্কিত ইউপি সদস্য শাহেনা বেগম। আর সেই কারণে পুরো ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্কের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। 
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগর সরকার পতনের পর উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ন্যায় সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন মিয়া গা ঢাকা দেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেবাপ্রত্যাশীদের নানাবিধ সমস্যার বিষয়টি বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরার নজরে আসে। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে তিনি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এদিকে সোনারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন মিয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া তিনি উপজেলার আলোচিত নয়ন হত্যা মামলার ৩৫নং আসামী। আর সেই কারণেই তিনি এলাকা ছাড়া। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে চেয়ারম্যান প্যানেল জরুরি হয়ে পড়ে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ১.৪.৫ চেয়ারম্যান প্যানেল ধারা অনুযায়ী শাহেনা বেগম নির্বাচিত হয়নি। সোনারামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্যানেল ১ হলেন ৪নং ওয়ার্ডের কালন হোসেন, চেয়ারম্যান প্যানেল ২ মনির মিয়া ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং চেয়ারম্যান প্যানেল ৩ শাহেনা বেগম। 
অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান প্যানেল ১ কালন মিয়া এবং চেয়ারম্যান প্যানেল ২ মনির মিয়াকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে, যাতে করে তারা চেয়ারম্যান প্যানেলের দায়িত্ব গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করে। এমনকি শাহেনা বেগমকে ফুলের শুভেচ্ছা জানাতে বাধ্য করা হয় বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ফলে পুরো ইউনিয়নে কানাঘুষা শুরু হয়।
শাহেনা বেগমের স্বামী ছগির মিয়া ওরফে পল্টিবাজ ছগির বাঞ্ছারামপুরের আলোচিত নয়ন হত্যা মামলার ১৯ নং আসামী। গ্রেফতার আতঙ্কে অন্যান্য আসামীরা এলাকা ছাড়া থাকলেও পল্টিবাজ ছগির দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। একসময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও ২০০৯ সালের দিকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরে সোনারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহিন মিয়ার ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিতি পান পল্টিবাজ ছগির। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন তিনি। এমনকি শাহিন চেয়ারম্যান ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাদিদ আল রহমান জনি চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে স্ত্রী শাহেনা বেগমকে কৌশলে নির্বাচনে বিজয়ী করতে সক্ষম হন। পরে ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম ও জনি চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়মিত বাজার সদাই করে দিতেন ছগির মিয়া। যদিও ক্যাপ্টেন তাজ সাহেব বরাবরই এলাকা থেকে নেয়া বাজারগুলোর বাড়তি দাম দিয়ে দিতেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাতারাতি ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছি’ বলে বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। আর তখনই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ছগির মিয়া পল্টিবাজ ছগির হিসেবে পরিচিতি পায়। 
নয়ন হত্যা মামলার আসামী ছগির মিয়ার স্ত্রী শাহেনা বেগম চেয়ারম্যান প্যানেল দায়িত্ব পাওয়ায় পুরো ইউনিয়নের জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিগত সময়ে শাহিন চেয়ারম্যানের সাথে আঁতাত করে সরকারি প্রকল্পে নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে শাহেনা বেগম ভোট দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বিগত সময়ে শাহিন চেয়ারম্যান আইন কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চেয়ারম্যান প্যানেল গঠন করেন। এতে করে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেধাবী এবং দক্ষ সদস্যরা বাদ পড়ে যান। আর সেখানে ঠাঁই হয় অযোগ্য শাহেনা বেগমের।
এই ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্যরা হলেন শামীম আহম্মেদ, মো. ইসমাইল, মো. হেলাল উদ্দিন, জামাল মিয়া, হনুফা বেগম, মিজান ভূইয়া, দুলাল মিয়া, জুলেখা খাতুন এবং ফরিদ মিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুলারামপুরের জনৈক ব্যক্তি বলেন, শাহেনা মেম্বারের স্বামী নয়ন হত্যার আসামী। সে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না। অথচ একই মামলার আসামী হয়ে ক্যাপ্টেন তাজ জেলখাটছে। আবার শাহেনা মেম্বার এখন এলাকায় চেয়ারম্যান প্যানেল। 
নিহত নয়নের নিকটাত্মীয় জানান, নয়ন হত্যা মামলার আসামীর স্ত্রীর প্রমোশন হলো। আমাদের আর কিছু বলার নেই। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম।  
সোনারামপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা, স্থানীয় সরকার বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উপ পরিচালক শঙ্কর কুমার ও জেলা প্রশাসক দিদারুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই সাথে বিগত সময়ে শাহেনা বেগমের নামে সরকারি বরাদ্দের সকল প্রকল্পের সঠিক তদন্তের দাবি জানান।     

Side banner