ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মুজিব কিল্লার নামে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এই প্রকল্পের পরিচালক, ঠিকাদার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপ, অতিরিক্ত বিল দাখিল, এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং অন্যান্যরা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
তাদের বক্তব্য, মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, ঠিকাদার এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা জায়গা নির্ধারণ ও সমীক্ষা ছাড়া বিলাসী এ প্রকল্পে বিপুল টাকার ব্যয়কে সরকারি গচ্চা হিসেবেই দেখতে পায় বাঞ্ছারামপুরের সাধারণ মানুষ। তাছাড়া উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে মুজিব কিল্লার স্থান নির্ধারণ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে এই কিল্লাটি সাধারণ মানুষের কোন কাজেই আসছে না। বলতে গেছে সরকারি টাকার হরিলুট হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদি পশু রক্ষায় সারা দেশে স্থাপন করা হয় আশ্রয়কেন্দ্র। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে এসব ভবন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভবনের সামনের খোলা জায়গা ব্যবহার করা হবে খেলাধুলায়। সরকার এই প্রকল্পের নাম দিয়েছিল ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। তবে সাড়ে চার বছর পর ১০০টি কিল্লার নির্মাণ বাতিল করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বাঞ্ছারামপুরে মুজিব কিল্লার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানহীন সামগ্রী দিয়ে নির্মিত এই কিল্লা এরই মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। লোকালয় থেকে অনেক দূরে নির্মাণের কারণে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে লাইট-ফ্যান কিংবা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি প্রশ্নবিদ্ধ।
উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের শান্তিপ্রর গ্রামে মুজিব কিল্লার উপকারভোগী যারা হবেন, তারা বলছেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এই কিল্লা আশ্রয়ের পরিবর্তে মরণফাঁদ হয়ে উঠতে পারে। যথাযথ তদারকির অভাব এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ভবন অবকাঠামো ফাটল ধরে ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের কিল্লা নির্মাণের জায়গা নির্বাচন করেছেন স্থানীয় এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম ও তার ভাগিনা উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী জাদিদ আল রহমান জনি। ঠিকাদারি কাজের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে এমপি অনুসারী ও তৎকালিন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মহিদুল ইসলামের স্বজনকে। ফলে নিম্নমানের কাজ করে সহজেই বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে গবাদি পশু এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য এ কিল্লা নির্মাণ। কিন্তু নিম্নমানের কাজের কারণে কিল্লার অবস্থা ভঙ্গুর। কিল্লায় মাটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ভিটি বালু। ভবনে ফাটল স্পষ্ট। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে এই কিল্লা মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। উল্টো মরণফাঁদ হিসেবে দেখা যেতে পারে। নিম্নমানের ইট দিয়ে কলাম তৈরি, পুরুত্ব কম, দুর্বল ব্লক, নিম্নমানের রড ও রডের কম ব্যবহারসহ নানা অসংগতি রয়েছে। তাছাড়া কিল্লা নির্মাণে ৬০ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইল বসানোর কথা থাকলেও সেখানে অনিয়ম করা হয়েছে। পাইল কম বসানো, রডের পরিমাণ কম, অপরিষ্কার পাথর দিয়ে ঢালাইসহ নানা অনিয়মের বিষয়টি স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে।
বাঞ্ছারামপুরের সাধারণ মানুষ মুজিব কিল্লার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আপনার মতামত লিখুন : :