• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
জাপানে শ্রমবাজার-২০২৪

নেপাল থেকে অর্ধলাখ, বাংলাদেশ থেকে গেছে সাড়ে তিন হাজার


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম নেপাল থেকে অর্ধলাখ, বাংলাদেশ থেকে গেছে সাড়ে তিন হাজার

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে জনশক্তি রফতানিতে সম্ভাবনাময় গন্তব্যের নাম জাপান। সামনের ১৫ বছরে দেশটিতে এক কোটির বেশি কর্মী প্রয়োজন। কৃষিকাজ, নির্মাণ খাত, কেয়ার গিভার, অটোমোবাইল, শিপিংসহ ১৬ ক্যাটাগরিতে জাপানে জনশক্তি রফতানির সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ উল্লেখ করার মতো কর্মী পাঠাতে পারছে না। অন্যদিকে নেপাল, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শ্রমিক যাচ্ছে দেশটিতে। সংখ্যাটি বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ। ভাষা না জানা ও সংশ্লিষ্ট কাজে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে দেশটিতে জনশক্তি রফতানির সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘জাপানের শ্রমবাজার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া হাসান।
প্রবন্ধের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে নেপাল থেকে ৯৪২ জন জাপানের কর্মবাজারে প্রবেশ করেন। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গিয়েছিলেন ৮৩১ জন। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে জাপানে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কাছাকাছি ছিল। কিন্তু এখন পাঁচ বছরের ব্যবধানে নেপাল থেকে জাপানে কর্মী যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ১০ গুণ। ২০২১ সালে নেপাল থেকে জাপানে যান ১ হাজার ২২৭ জন, অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৭৫ জন।
নেপালের থেকে জাপানে কর্মী পাঠানোয় বড় পরিবর্তন আসে ২০২২ সালে। এ বছর দেশটি থেকে রেকর্ড ৪২ হাজার ২৮৪ জন কর্মী জাপানে কাজের সুযোগ পান। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো হয় মাত্র ৫ হাজার ১৮৫ জন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে নেপাল ৫৬ হাজার ৭০৭ কর্মী পাঠিয়েছে সূর্যোদয়ের দেশ খ্যাত জাপানে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে গেছেন মাত্র ৩ হাজার ৫৭৪ জন কর্মী।
জিয়া হাসান বলেন, সরকারি ও বেসরকারি—উভয় ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণের মান অপর্যাপ্ত। বেশির ভাগ প্রশিক্ষক জাপানি ভাষা ভালো জানেন না। প্রশিক্ষকরা সাধারণত জাপান ফেরত এবং আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই ভাষা শিখেছিলেন। উচ্চ বেতনের কারণে প্রশিক্ষক আনতে বেসরকারি অপারেটরদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত এন-ফোর কোর্স নেই এবং এ স্তরের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষকও নেই। এসব কারণে বাংলাদেশ থেকে আশানুরূপ কর্মী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, জাপান অনুমোদিত ৯৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাত্র ৩০টি প্রতি বছর কর্মী পাঠাচ্ছে। ২০০৪ থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২০ বছরে এসব এজেন্সির মাধ্যমে মাত্র ৫ হাজার ১৪ জন কর্মী জাপান যেতে পেরেছেন। এছাড়া আইএম জাপান নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সময়কালে ৭০২ কর্মী জাপানে গেছেন।
দেশটিতে কর্মী পাঠাতে জাপানি ভাষা শেখা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার (জেএলপিটি) প্রাথমিক স্তর এন-ফাইভ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৮ হাজার ৬৪ জন এন-ফাইভ লেভেলে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৮৮৩ জন। একই মাসে এন-ফোর লেভেলে ৩ হাজার ৯১ জন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ৫১১ জন।
বাংলাদেশ না পারলেও নেপাল কীভাবে এত কর্মী জাপানে পাঠাচ্ছে জানতে চাইলে জিয়া হাসান বলেন, নেপালের আমলাতন্ত্র অনেক শক্তিশালী। কোনো প্রজেক্ট নিয়ে সহজে বাস্তবায়ন করতে পারে। আমাদের পোশাক খাত আছে কিন্তু নেপালে সে রকম বড় খাত নেই। তাই আমাদের চেয়ে অভিবাসন বিষয়ে তারা বেশি সিরিয়াস। তাদের এ খাত অনেক বেশি শক্তিশালী ও নিয়মতান্ত্রিক। নেপালিদের চেহারা মঙ্গোলীয়দের মতো, তাই জাপানিরা তাদের বেশি পছন্দ করে। এছাড়া বিদেশে যেতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক সহায়তা দেয়।
বিএমইটির মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর বলেন, ভাষা শেখার জন্য প্রশিক্ষণার্থীর ছয় মাস সময় লাগে। এ দীর্ঘ সময় নিজেদের ব্যয় বহন করা সবার জন্য সম্ভব না। যে কারণে অনেকেই মাঝপথে ঝরে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য ভাতা কিংবা বিদেশ যেতে ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সেমিনারে জাপানের শ্রমবাজার নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জাপানে কর্মীর চাহিদা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে সে চাহিদা পূরণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাধান একটাই চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। আমরা জাপান সেল করেছি। সেখানে ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট করা হবে। জাপানের ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি প্রক্রিয়া রাখা হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষ করার উদ্যোগ নিচ্ছি। জাপানি উদ্যোক্তাদের টিটিসির দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা দায়িত্ব নিয়ে জাপান থেকে বিশেষজ্ঞ এনে প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। জাল সনদপত্র ও ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টকে বিদেশগামী বাংলাদেশীদের ভিসা জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। 
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা ভাবে যে জাল সনদ এবং অদক্ষতা নিয়ে কোনোভাবে বিদেশে যেতে পারলেই হয়। ফলে অনেক দেশে একসঙ্গে ভিসা জটিলতা হচ্ছে। জাপানের ভিসা আবেদনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না, এটার একটা কারণ ভুয়া সার্টিফিকেট, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট। এজন্য এখন শাস্তির ব্যবস্থা জরুরি।

Side banner