ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে অবৈধভাবে পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ফলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য, নদী ও কৃষিজমি।
উপজেলার পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ডোমরাকান্দি-নবীপুর গ্রামে গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে রাতে ট্রাকভর্তি পুরনো ব্যাটারি এনে নদীর ধারে খোলা জায়গায় আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। তবে এসব ব্যাটারি কোথা থেকে আনা হচ্ছে, তা জানা যায়নি।
প্রশাসনের অনুমতি বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই হাজী আমিরুল ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক সাইফুল ইসলাম এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন ওবায়দুল্লাহ, জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
স্থানীয় যুবদল নেতা এমরান হোসেন কামাল বলেন, আমরা আর চুপ থাকব না। গ্রামের মানুষ, ফসলি জমি ও পরিবেশ সব কিছুই হুমকিতে। বিষয়টি প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানিয়েছি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারণে কালো ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হচ্ছে। এতে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা অজানা রোগ দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি প্রতিবাদ করায় এক যুবককে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাতের অন্ধকারে শ্রমিকরা কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই খোলা জায়গায় ব্যাটারি পোড়ায়। এতে বিষাক্ত ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেই সিসা গলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ কেজি ওজনের বাটা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা হয়।
এক বাসিন্দা জানান, আমার বাড়ির পাশে কারখানা। এখানকার ধোঁয়ায় বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পথচারী আলামিন মিয়া বলেন, এসিডযুক্ত ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
কারখানার মালিক সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমরা পুরনো ব্যাটারি গলিয়ে সিসা তৈরি করি, কারো ক্ষতি করি না। তবে এলাকাবাসী না চাইলে আমরা এটি বন্ধ করে দেব।
অংশীদার ওবায়দুল্লাহ জানান, তাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে, তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সিসা এমন এক ক্ষতিকর পদার্থ, যা জমিতে পড়লে ফসল জন্মায় না; জন্মালেও তা মানবদেহের জন্য বিষাক্ত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বর্মন বলেন, ব্যাটারি পোড়ালে সিসা, এসিড, পারদ, নিকেল ও ক্যাডমিয়াম বাতাসে মিশে যায়। এতে ক্যান্সার, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও শিশুদের বিকলাঙ্গতার মতো রোগ হতে পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমন্বয়ক শামীম আহমেদ বলেন, এসব রাসায়নিক নদীর পানিতে মিশে জলজ প্রাণী, গবাদি পশু ও মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, অবৈধ সিসা কারখানার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক রাকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। আজই ডিসি স্যারকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কারণ তারা কোনো অনুমতি নেয়নি।
আপনার মতামত লিখুন : :