• ঢাকা
  • রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

জনস্বাস্থ্যের ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রকৌশলী ছামিউল এখনও বহাল তবিয়তে


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩১, ২০২৫, ১০:৪০ এএম জনস্বাস্থ্যের ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রকৌশলী ছামিউল এখনও বহাল তবিয়তে

আওয়ামী সরকারের শাসনামলে তিনি যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই নানা অপকৌশলে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির আড়ালে ঠিকাদারি, ঘুষ বাণিজ্য, টেন্ডার টেম্পারিং, কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও তাঁর অবস্থানের কোনো হেরফের হয়নি। এখনও বহাল তবিয়তে থেকে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। 
‘দুর্নীতিবাজ’ নির্বাহী প্রকৌশলী ছামিউল এখনও বহাল। তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী। বর্তমানে শেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বড়জোর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালনকালে জেলায় জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, ঘুষ বাণিজ্য, অফলাইনে টেন্ডার করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ছামিউল হক। এসব দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০২১ সালে তাঁকে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একই পদে বদলি করা হয়। 
ছামিউল হকের দুর্নীতির বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, দুুদক চেয়ারম্যান ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করা হলেও এখনো আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, ময়মনসিংহে থাকাকালে তাঁর বিভিন্ন দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে সদরের গজিয়াবাড়ী মাঠে বিভাগীয় ল্যাবের সামনে বালু ভরাটের নামে কোনো কাজ না করেই তিন লাখ টাকা উত্তোলন, মাঠের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে নামমাত্র কাজ করিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বাসভবনের সামনের রাস্তা মেরামতে পুরনো নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর রং করার কাজে দুর্নীতি করে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। আবার কিছু ঠিকাদার কাজ করেও তাঁর পছন্দের না হওয়ায় বিল নিয়ে তাঁরা দুর্ভোগ পোহায়েছেন।
ঠিকাদাররা বলছেন, শুধু চলতি বছরের জুন মাসেই তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল এবং নানাভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া তিনি  পৌরসভা প্রকল্পের কাজের ঠিকাদার মেসার্স কালু শাহ ট্রেডার্সের বিলের টাকা চেকের মাধ্যমে নিজের নামে উত্তোলন করেছেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় ফান্ডে তিনি নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিজের অবস্থা পাকা করে রেখেছিলেন। তাঁর সময় মনয়নসিংহে ‘ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। খরচ ধরা হয় ৪০ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা। প্রকল্প কার্যক্রমের শুরু থেকে তিনি নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয় করলেও পৌরবাসীর ঘরে সুপেয় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগী প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদারের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ছামিউল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপির ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বারবার দুর্নীতি করেও নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখেন। সে সময় তিনি প্রায় চার বছর ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য তিনি কমপক্ষে ৫ শতাংশ কমিশন নিতেন। তাঁর বাছাইকৃত ঠিকাদার ছাড়া সেখানে জনস্বাস্থ্যের কোনো কাজ হতো না। ছামিউলকে সে সময় তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালও প্রশ্রয় দিতেন বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছামিউল হক ৫% থেকে ৭% অর্থের বিনিময়ে দরপত্রের গোপন রেট পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। এ ছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর প্রাপ্ত ঠিকাদারকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দিতে এক থেকে দেড় শতাংশ নেন তিনি। কোনো ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তিনি কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া বিলের ক্ষেত্রে ৩% দিতে হবে বলে অলিখিত আদেশ জারি করেন তিনি। ফাইলের সঙ্গে টাকা না দিলে দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখেন। তাঁর কাজে সহায়তা করেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, টেন্ডার কমিটি, টেন্ডার যাচাই-বাছাইসহ দরপত্র প্রক্রিয়ায়, রাজনৈতিক প্রভাব, ঘুষ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নেন তিনি। তাঁর দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
এসব বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী ছামিউল হকের মোবাইল ফোনে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।