• ঢাকা
  • শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

৩৪ হাজার প্রাইমারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই 


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২, ২০২৫, ০১:২১ পিএম ৩৪ হাজার প্রাইমারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই 

দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১০৬টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। অন্যদিকে মামলা জটিলতায় আটকে আছে প্রধান শিক্ষকের ৩১ হাজার ৪৪৯টি পদ। ফলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে চালানো হচ্ছে স্কুল।
এতে শ্রেণিকক্ষে পড়ানো শিক্ষকের সংখ্যা কমে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। আর শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে শেষ করছে প্রাথমিক শিক্ষা, যার প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য থাকা প্রধান শিক্ষকের পদে দ্রুততম সময়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গত ১৫ জুলাই এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশ দেন।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কয়েকটা ক্যাটাগরি করে নিয়োগ দিতে হবে। যাঁরা বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন এবং অভিজ্ঞ, তাঁরা প্রাধান্য পাবেন। এর পাশাপাশি তরুণদেরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এই নিয়োগপ্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে অনুমোদিত প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬৫ হাজার ৫০২টি। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৩১ হাজার ৩৯৬ জন কর্মরত আছেন। শূন্যপদ রয়েছে ৩৪ হাজার ১০৬টি। এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে এক কোটি ১০ লাখ শিশু।
সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষকের ৩৪ হাজার ১০৬টি শূন্যপদের মধ্যে ৩১ হাজার ৪৫৯টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু জাতীয়কৃত শিক্ষকদের গ্রেডেশনসংক্রান্ত ৭৩/২০২৩ নম্বর সিভিল আপিল মামলা চলমান থাকায় তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শূন্যপদগুলোর মধ্যে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদ দুই হাজার ৬৪৭টি। সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদগুলোর ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করে অবশিষ্ট দুই হাজার ৩৮২টিতে স্বতন্ত্রভাবে সরাসরি নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সচিবালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সরাসরি নিয়োগযোগ্য প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের জন্য শিগগিরই পিএসসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। আর আপিল মামলা নিষ্পত্তি হওয়ামাত্র সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিযোগ্য পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক লাখ আট হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয় করা হয়। তিন ধাপে এই জাতীয়করণ হয়। প্রথম ধাপের ২২ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষকের মধ্যে কিছুসংখ্যক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপের বাকি শিক্ষকসহ দ্বিতীয় ধাপের দুই হাজার ২৫২টি এবং তৃতীয় ধাপের ৯৬০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সবাইকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকরা। একই সঙ্গে তাঁরা আদালতেরও দারস্থ হন।
এরপর ২০১৭ সালে পুরনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮ হাজার সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দিলে জাতীয় হওয়া বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক মামলা করে তা আটকে দেন। পরে পুরনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আদালতে যান। আইনি লড়াই শেষে বিচারিক রায় পক্ষে আসায় তাঁরা প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পান। পরে জাতীয়কৃত শিক্ষকরা আত্তীকরণ গেজেট ২০১৩-এর বিধি ৯-এর উপবিধি ১ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন। এই রিটের শুনানির পর আদালতের রায় বাদীর পক্ষে যায়। পরে সরকারপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে উভয় পক্ষের শুনানির পর আদালত আগের রায় স্থগিত করেন।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা মামলায় রায় পেয়েছি। কিন্তু বিগত সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল চলমান রয়েছে। শিক্ষকদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন আর শুধু পাঠদানের কাজে সীমাবদ্ধ নন। সরকারি প্রায় ২০ ধরনের কাজে তাঁদের যুক্ত রাখা হয়। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষককে সপ্তাহের দু-তিন দিন উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিতে হয়। আর শিক্ষকদেরও প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কাজে অংশ নিতে হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক না থাকা স্কুলগুলোতে একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় তাঁর পক্ষে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সম্ভব হয় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যে স্কুলে পাঁচজন শিক্ষক আছেন, ওই স্কুলটি মূলত চারজন শিক্ষক পাচ্ছে। আবার বেশির ভাগ স্কুলে একজন শিক্ষক নানা কারণে ছুটিতে থাকেন। কিংবা কেউ পিটিআই প্রশিক্ষণ বা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকেন। এতে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু-তিনজন শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে সব শ্রেণিতে নিয়মমতো পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (আইন সেল) মো. হোসেন আলী বলেন, আপিল বিভাগে বেশ কয়েকবার শুনানি হয়েছে। কিন্তু এখনো সব বিধি ও পরিপত্র অনুযায়ী একটি যৌক্তিক জায়গায় তারা আসতে পারেনি। আমরা চাই, গ্রেডেশনটা এমনভাবে হোক, যাতে কোনো পক্ষেরই কোনো অভিযোগ না থাকে। সবাই সমন্বিতভাবে সুবিধা পাক। আশা করছি, শিগগিরই আমরা আপিল বিভাগের রায় পাব। সেটা পেলেই প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।