• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
না ফেরার দেশে যতীন সরকার

প্রজ্ঞা, মানবিকতা ও স্মৃতির আলোয় থাকা এক অধ্যাপক 


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | শ্যামল নাথ  আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০১:০৯ পিএম প্রজ্ঞা, মানবিকতা ও স্মৃতির আলোয় থাকা এক অধ্যাপক 

যতীন সরকার ছিলেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পরিসরে এক বিরল বুদ্ধিজীবী প্রাবন্ধিক, গবেষক, সাহিত্যিক, চিন্তক ও শিক্ষক হিসেবে তাঁর অবদান যুগের পর যুগ অনুরণিত হবে। ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতিকে তিনি দেখতেন গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গি সাহিত্যিক শৈলীতে প্রকাশ করতেন এমন স্বচ্ছতা ও তীক্ষèতায়, যা পাঠককে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিত। তাঁর লেখায় ছিল মাটি ও মানুষের গন্ধ, ইতিহাসের নির্মোহ পাঠ, এবং ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি এক অটল দায়বদ্ধতা।
আমার সাহিত্যজীবনে যতীন সরকারের প্রভাব অবিস্মরণীয়। ২০২২ সালে দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে আমার কবিতার ওপর একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিনি। সেটি শুধু প্রশংসা নয়, বরং ছিল এক গভীর পাঠ ও ব্যাখ্যা যা আমাকে নিজের কবিতাকে নতুন চোখে দেখার সুযোগ দিয়েছিল। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পরও তিনি সেটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে প্রতিটি কবিতার সারবস্তু নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাঁর সেই প্রশংসা ছিল না সৌজন্যের আনুষ্ঠানিকতা বরং ছিল পথ দেখানো এক আলোকবর্তিকা।
যদিও আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে লিখেছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান,  কবি আল মাহমুদ,  কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক হায়ৎ মামুদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের মতন বিখ্যাত মানুষেরা। 
আমি বহুবার গিয়েছি তাঁর নেত্রকোনার বাসায়। প্রতিবারই মনে হতো, আমি প্রবেশ করছি এক জীবন্ত গ্রন্থাগারে, যেখানে বই, ভাবনা ও আলো একাকার হয়ে আছে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা, আর শেষ ছবিটি তোলা। আজ ছবিটি শুধু একটি ফ্রেমে বাঁধানো স্মৃতি নয় এটি হয়ে উঠেছে সময়ের কাছে আমার অমূল্য দলিল।
যতীন সরকারের সঙ্গে সময় কাটানো মানে ছিল প্রজ্ঞার পাঠশালায় উপস্থিত থাকা। তাঁর বিনয়, সততা, তীক্ষè বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও গভীর মানবিকতা আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। আমি এমন এক সাহিত্য অন্তপ্রাণ, যে গত ১৭ বছরের ঢাকা জীবনে শতাধিক বিখ্যাত মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জীবনের অনেক সময় ব্যয় করেছি। অনেকেই হয়তো বলবেন এ এক প্রকার সময় নষ্ট। কিন্তু আমি জানি, সেসব আলাপ ও অভিজ্ঞতা আমার সাহিত্যবোধ, জীবনদৃষ্টি ও মানুষ বোঝার ক্ষমতাকে সমৃদ্ধ করেছে।
আজ ৯০ বছর বয়সে যতীন সরকার আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর চলে যাওয়া মানে কেবল একজন প্রাজ্ঞ গবেষককে হারানো নয় এটি এক জীবন্ত জ্ঞানের ভাণ্ডারের অন্তিম পরিসমাপ্তি। বাংলা বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না। তবুও, তাঁর চিন্তা, লেখা ও মানবিক স্নেহ প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের পথ দেখাবে। যতীন সরকার বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টি, তাঁর ভাবনা, তাঁর অকৃত্রিম মানবিকতায়।

Side banner