• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

বিধর্মীদের উৎসবে পূজায় চাঁদা দেওয়া: ইসলামী নির্দেশনা কি?


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | মুফতি আলাউদ্দিন সাদি  সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম বিধর্মীদের উৎসবে পূজায় চাঁদা দেওয়া: ইসলামী নির্দেশনা কি?

বর্তমান সমাজে একটি স্পর্শকাতর বিষয় দেখা দিয়েছে অমুসলিম ভাইয়েরা যখন ধর্মীয় পূজা-পার্বণের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করেন, তখন মুসলমানরা তা দেবেন কি দেবেন না? অনেকেই সামাজিক চাপ কিংবা সম্পর্ক রক্ষার খাতিরে সহায়তা করে ফেলেন। অথচ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত।
প্রথমেই বুঝতে হবে, ইসলাম মানবিক সহায়তার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত রেখেছে। অসহায়, দরিদ্র, মিসকিন ধর্ম নির্বিশেষে যে কেউ যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাকে দান-সদকা করা বৈধ। কুরআনে আল্লাহ বলেন
> لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يَهْدِى مَن يَشَآءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ
(সূরা বাকারা: ২৭২)
অর্থাৎ, হিদায়াত দেওয়া তোমার দায়িত্ব নয়; বরং তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তা তোমাদেরই জন্য।
রাসুলুল্লাহ ﷺ–এর জীবন থেকেও আমরা এর দৃষ্টান্ত পাই। আসমা (রা.)-কে নবী ﷺ তাঁর মুশরিক মায়ের সঙ্গে সদাচার করতে বলেছিলেন (বুখারি: ৩১৮৩)। তিনি অসুস্থ এক ইহুদি বালকের খোঁজ নিয়েছিলেন (বুখারি: ৫৬৫৭)। এমনকি প্রাণী রক্ষার ক্ষেত্রেও সওয়াবের কথা বলেছেন (বুখারি: ২৩৬৩)। এসব দলিল প্রমাণ করে, মানবিক কারণে সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা।
কিন্তু এখানেই মূল পার্থক্য মানবিক সহায়তা আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহযোগিতা এক নয়। পূজা-পার্বণের মতো অমুসলিমদের ধর্মীয় কর্মসূচি শিরক ও কুফরের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব কর্মকাণ্ডে আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে সাহায্য করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন
> وَلَا تَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ
(সূরা মায়িদাহ: ২)
অর্থ: গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না।
আরও এসেছে
 وَلَا تَرْكَنُوٓا۟ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ
(সূরা হুদ: ১১৩)
অর্থ: যালিমদের প্রতি ঝুঁকো না, নতুবা জাহান্নামের আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে।
রাসুল ﷺ সতর্ক করে বলেছেন
 ্রلَا تَدْخُلُوا عَلَى الْمُشْرِكِينَ فِي كَنَائِسِهِمْ يَوْمَ أَعْيَادِهِمْ، فَإِنَّ السَّخْطَةَ تَنْزِلُ عَلَيْهِمْগ্ধ
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ১৬০৯)
অর্থ: মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনে প্রবেশ কোরো না, কারণ তখন তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়।
ফুকাহায়ে কেরাম এ বিষয়ে সর্বসম্মত। ইমাম আবু হাফস আল কাবীর (রহ.) বলেন কেউ যদি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর মুশরিকদের উৎসবে দান করে, তবে সে কুফরি করেছে এবং তার সব আমল ধ্বংস হয়ে গেছে (দুররুল মুখতার: ৬/৭৪৫)।
অতএব বিষয়টি সুস্পষ্ট: অমুসলিমদের মানবিক কারণে সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা, কিন্তু তাদের ধর্মীয় পূজা-পার্বণে চাঁদা দেওয়া বা সহযোগিতা করা হারাম। এতে শুধু সামাজিক ভুল নয়, বরং শিরকি কাজে অংশগ্রহণ এবং গুনাহে কবীরায় পতিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আজকের সমাজে আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। কেউ কেউ মনে করেন, সামান্য কিছু দিলে ক্ষতি কী! কিন্তু ইসলাম ক্ষুদ্রতম শিরক বা গুনাহকেও গুরুত্ব সহকারে দেখেছে। আল্লাহর দ্বীন রক্ষার স্বার্থে মুসলমানদের উচিত—সঠিক সীমারেখা বুঝে চলা। মানবিক সহায়তায় অগ্রগণ্য হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি শিরক ও কুফরের কোনো কাজে জড়ানো থেকে দূরে থাকা আরও জরুরি।
আমাদের করণীয় হলো অমুসলিম প্রতিবেশী বা সহকর্মী অসুস্থ হলে খোঁজ নেওয়া, ক্ষুধার্ত হলে খাওয়ানো, দারিদ্র্যে কষ্টে থাকলে সহায়তা করা। কিন্তু পূজা বা ধর্মীয় উৎসবে চাঁদা দেওয়া নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি হারাম, গুনাহে কবীরা এবং শিরকি কাজে সহযোগিতা। তাই মুসলিম সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে সম্পর্ক রক্ষার নামে আমরা নিজেরাই বড় গুনাহে লিপ্ত না হয়ে যাই। মহান আল্লাহ তা য়ালা সমস্ত মুসলিমে কে কবিরা গুনাহ তথা শিরক থেকে মুক্ত থাকার তাওপিক দান করুন আমিন।
মুফতি আলাউদ্দিন সাদি 
প্রিন্সিপাল: মিরপুর ফতেপুর কারিগরি মাদরাসা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Side banner