স্পেনের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে দেখা যায় মুসলিম শাসকদের সময়ের স্থাপত্যের চিহ্ন। দেশটির মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মুসলিম বাস করেন। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার মুসলিমদের মাধ্যমে স্পেনে ইসলামের আগমন ঘটে। উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত মুসলিমরা স্পেনের ভাষা ও খাবার, স্থাপত্যে রেখে গেছেন নিজেদের ছাপ। এখনো স্প্যানিশ ভাষায় অনেক আরবি শব্দ ব্যবহার হয়।
স্পেনের প্রায় সব অঞ্চলে মুসলিম স্থাপত্যের স্মৃতিস্তম্ভ পাওয়া যায়। এখানে এমন পাঁচটি খ্যাতনামা নিদর্শন তুলে ধরা হলো :
১. আল হামরা, গ্রানাডা
গ্রানাডার আল হামরা প্রাসাদ-দুর্গটি ১৩শ শতকে নাসরিদ শাসকরা নির্মাণ করেছিলেন। এটি মূলত সেনাবাহিনী, শাসকের প্রাসাদ ও মসজিদের সমন্বয়। এর লাল প্রাচীর, নকশা এবং বিস্তীর্ণ বাগান আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। ১৫শ শতকে মুসলিম শাসনের শেষের পর এটি চার্চে রূপান্তরিত করা হয়। তবে নান্দনিকতা এবং স্থান বিন্যাসে এতে এখনো ইসলামী প্রভাব স্পষ্ট।
২. কর্ডোভার গ্রেট মসজিদ
১০ম শতকে নির্মিত এই মসজিদবিশাল মিহরাব এবং গম্বুজের নকশার জন্য বিখ্যাত। মসজিদটি তিনবার সম্প্রসারিত হয়েছিল। ১৩শ শতকে এটি দখল করে চার্চ বানানো হয়। তবে এর মূল স্থাপত্য শৈলী আজও অক্ষুণ্ন।
৩. মদিনা আজ-জাহরা, কর্ডোবা
মদিনা আজ-জাহারা ছিল ১০ম শতকের একটি রাজপ্রাসাদ, যেখানে আরাম ও প্রশাসনিক কাজের জন্য থাকতেন আবদ আল-রহমান তৃতীয়। এখানে বাগান, প্যালেস এবং মরক্কোর নকশার প্রভাব স্পষ্ট। ‘এটি শুধু একটি প্রাসাদ নয়, বরং একটি ছোট শহরের মতো ছিল বলে’ মন্তব্য করেন স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা।
৪. আলজাফেরিয়া, জারাগোজা
১১শ শতকে হুদিদের রাজাদের জন্য নির্মিত এই প্রাসাদ ‘আনন্দময় প্রাসাদ’ নামে পরিচিত। বাহ্যিকভাবে এটি দুর্গের মতো শক্তিশালী, কিন্তু ভিতরের অংশে সূক্ষ্ম আরক এবং সুন্দর প্যাটিও দেখা যায়। পরে এটি খ্রিস্টান রাজারা দখল করেন এবং বর্তমানে আঞ্চলিক সংসদ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৫. রিয়াল আলকাজার, সেভিলা
১০ম শতকে দুর্গ হিসেবে নির্মিত এই প্রাসাদ ১২০০ সালে পুনর্নির্মিত হয়েছে। তবে এর নকশায় এখনো মুসলিম প্রভাব স্পষ্ট লক্ষ করা যায় —স্বর্ণালী আর্চ, কলাম এবং নান্দিনিক নকশা। এই দুর্গে আলহামরার প্রভাব স্পষ্ট, যা স্পেনের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বিশেষ করে তোলে।
আপনার মতামত লিখুন : :