আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছেও তিনি ছিলেন এক আবেগের নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার সক্রিয় সমর্থন এবং সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তার এক বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
লতা মঙ্গেশকরের দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনে বাংলা গান এবং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে তার ছিল গভীর সংযোগ। ১৯৫৬ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে’ গানটি ছিল তার গাওয়া প্রথম বাংলা গান। এরপর থেকে অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গান তিনি উপহার দিয়েছেন। নিজের বাংলা উচ্চারণ নিখুঁত করার জন্য তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করতেন এবং বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করতেন।
এদিকে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লতা মঙ্গেশকর বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে বাঙালি শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে লতা মঙ্গেশকর একবারই বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় তিনি সুনীল দত্তের সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে সদ্য স্বাধীন দেশে কয়েকটি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। একই বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘রক্তাক্ত বাংলা’-তেও তিনি কণ্ঠ দেন। প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক সলিল চৌধুরীর সুরে ‘ও দাদাভাই মূর্তি বানাও’ শিরোনামের গানটিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার একমাত্র গান।
লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে বাংলাদেশের সংগীতজগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। লতাজীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পীও তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো স্মরণ করেন। কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এত বড় মাপের শিল্পী, কিন্তু মানুষ হিসেবে ছিলেন খুবই বিনয়ী। লতা মঙ্গেশকর নাই, এটা ভাবাই যায় না।’
২০১৭ সালে লতার বাসায় গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। তিনি জানান, রুনা লায়লার সহায়তায় তিনি লতাজির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। সে সময় আঁখি তার সঙ্গে ৩০ মিনিট কথা বলতে চাইলে তাকে আড়াই ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠ বিশুদ্ধতা, আবেগ এবং শৈল্পিক উৎকর্ষের প্রতীক হয়ে থাকবে। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এই কিংবদন্তি শিল্পী মারা গেলেও তার কালজয়ী গানগুলো আজও কোটি কোটি সংগীতপ্রেমীকে মুগ্ধ করে চলেছে।
আপনার মতামত লিখুন : :