সুস্থ দাঁতের জন্য সাধারণত নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাঁতের যত্ন শুধুমাত্র ব্রাশ বা দাঁতের যত্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিদিনকার খাবারও দাঁতের স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থোডেন্টিস্ট ডা. এরিন ফ্রাউন্ডর্ফ রিয়েল সিম্পল ডোতকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, কিছু খাবার স্বাভাবিকভাবেই দাঁতের জন্য বেশি উপকারী। এগুলো এনামেল শক্ত করে, ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, লালা স্রাব বাড়ায় এবং মাড়ি ও মুখগহ্বরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পনির: দাঁতের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ঢাল
যুক্তরাষ্ট্রের কসমেটিক ডেন্টিস্ট ডা. সানদীপ সাচার বলেন, পনিরে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফেট থাকে, যা দাঁতের এনামেলকে মজবুত করে। পাশাপাশি এটি মুখের অম্লতা (অ্যাসিড) নিরপেক্ষ করে মুখের স্বাভাবিক পিএইচ বজায় রাখে। পনির খেলে মুখে লালা তৈরি বাড়ে, যা খাবারের কণা ও জীবাণু ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে দাঁত ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। সহজ স্ন্যাকস হিসেবে পনির তাই দাঁতের জন্য একদম আদর্শ।
আদা: খারাপ গন্ধ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
দৈনন্দিন রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি আদা দাঁতের জন্যও উপকারী। ডা. এরিন ফ্রাউন্ডর্ফ বলেন, আদা মুখের ভেতরে থাকা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে। মাংস, মাছের পদ, তরকারি কিংবা আদা-চা সব জায়গাতেই আদা ব্যবহার করা যায়। এর প্রদাহরোধী উপাদান শুধু দাঁতই নয়, পুরো শরীরের জন্য উপকারী।
চিনি-মুক্ত চুইংগাম: দাঁতের শত্রু নয়, বন্ধু
অনেকেই মনে করেন চুইংগাম দাঁতের ক্ষতি করে। তবে গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। ডা. এরিন ফ্রাউন্ডর্ফ উল্লেখ করেন, যারা প্রতিদিন খাবারের পর বিশ মিনিট ধরে চিনি-মুক্ত চুইংগাম চিবান, তাদের দাঁতে গর্ত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। চুইংগাম চিবালে মুখে লালা বাড়ে, যা খাবারের কণা পরিষ্কার করে এবং ব্যাক্টেরিয়া থেকে তৈরি অ্যাসিডকে দুর্বল করে। ফলে ক্যাভিটি বা গর্ত, দাগ ও দুর্গন্ধ কমে যায়।
শাকসবজি: প্রাকৃতিক টুথব্রাশ
সবুজ শাকসবজি শুধু শরীরের জন্য নয়, দাঁতের জন্যও সমান উপকারী। ডা. ফ্রাউন্ডর্ফ বলেন, শাকের আঁশ দাঁতের জন্য প্রাকৃতিক ব্রাশের মতো কাজ করে। এগুলো দাঁতের ওপর জমে থাকা প্লাক দূর করতে সাহায্য করে। শাকসবজিতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতের এনামেলকে শক্ত করে এবং ফলিক অ্যাসিড মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পালং শাক, লাল শাক ধর্মী খাবার নিয়মিত খেলে দাঁত ও মাড়ি দুটোই সুস্থ থাকে।
ওটস: সকালের খাবার, দাঁতের যত্ন
ডা. সানদীপ সাচার বলেন, ওটসে প্রচুর ভিটামিন বি, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা মাড়িকে সুস্থ রাখে। ওটস চিবানোর সময় দাঁতের চারপাশে লালা নিঃসরণ বাড়ে, যা মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। সকালের নাশতায় ওটসের সঙ্গে মৌসুমি ফল, দই, বাদাম যোগ করলে দাঁত এবং শরীর দুইয়ের জন্যই উপকার পাওয়া যায়।
গাজর: দাঁতের প্রাকৃতিক ক্লিনার
যুক্তরাষ্ট্রের রিস্টোরেটিভ ডেন্টিস্ট ডা. জয়েস কাং বলেন, গাজরের মতো শক্ত ও খসখসে খাবার দাঁতের জন্যও উপকারী। গাজরের খসখসে গঠন দাঁতের ওপর জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এতে থাকা ভিটামিন এ - মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী।
কুইনোয়া: দানাজাতীয় খাবারের সেরা বিকল্প
ডা. সানদীপ সাচার বলেন, কুইনোয়াতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফেট থাকে, যা দাঁতের এনামেল মজবুত করে। এটি প্রোটিনে ভরপুর এবং অন্যান্য শর্করাযুক্ত খাবারের মতো দাঁতে লেগে থাকে না। তাই ভাত বা পাস্তার বদলে কুইনোয়া স্বাস্থ্যকর ও দাঁতের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে। দেশের বিভিন্ন সুপারশপে কুইনোয়া পাওয়া যায় তবে দাম কিছুটা বেশি। তাই যব, কলাই বা মসুর ডাল, ভুট্টা খাওয়া যেতে পারে। যব সহজলভ্য এবং এতে আঁশ ও খনিজ আছে যা দাঁতের স্বাস্থ্য ও হজম দুটোতেই উপকার করে। কলাই বা মসুর ডাল প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে। অন্যান্য শর্করাযুক্ত খাবারের মতো দাঁতে লেগে থাকে না। ভুট্টা আঁশ ও খনিজ সমৃদ্ধ। দাঁতের ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং মাড়ির জন্যও ভালো।
আপনার মতামত লিখুন : :