• ঢাকা
  • রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

গবেষণা: বিশ্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ মাত্র একটি


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ২৫, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম গবেষণা: বিশ্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ মাত্র একটি

বিশ্বের ১৮৬টি দেশের মধ্যে একমাত্র গায়ানাই এমন দেশ, যেখানে সব ধরনের খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে নিজ দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, খাদ্যে সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ একমাত্র দেশ হিসেবে উঠে এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার এই ছোট্ট দেশটির নাম।
প্রভাবশালী সাময়িকী ‘নেচার ফুড’-এ প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, সাতটি প্রধান খাদ্য উপাদান ফলমূল, সবজি, মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন এবং শর্করার উৎস প্রতিটির ক্ষেত্রেই গায়ানা নিজেদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম।
দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত গায়ানা, একটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ, যার উত্তর-পশ্চিমে ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণে ব্রাজিল, পূর্বে সুরিনাম এবং উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগর। ৮ লাখের কিছু বেশি জনসংখ্যা এবং বিস্তীর্ণ কৃষিজমির কারণে দেশটি খাদ্য উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
গায়ানার উর্বর মাটি, প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং অনুকূল জলবায়ু কৃষিকাজকে সহজ করেছে। এখানকার কৃষি খাত দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় চাহিদা পূরণেই মনোনিবেশ করে আসছে, ফলে দেশটি সাতটি খাদ্য উপাদানেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছে বলে গবেষকদের পর্যবেক্ষণ।
গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন জার্মানির গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা প্রতিটি দেশের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ এবং নাগরিকদের পুষ্টির চাহিদা—বিশ্ব প্রকৃতি তহবিলের ‘লাইভওয়েল ডায়েট’-এর মানদণ্ড অনুযায়ী তুলনা করে ফলাফল উপস্থাপন করেন।
বিশ্বব্যাপী ৬৫ শতাংশ দেশ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য বেশি উৎপাদন করলেও পুষ্টিকর উদ্ভিজ্জ খাবারে রয়েছে বড় ঘাটতি। গবেষণায় বলা হয়েছে, মাত্র ২৪ শতাংশ দেশ পর্যাপ্ত সবজি উৎপাদন করতে পারে, আর উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ও শর্করার উৎস উৎপাদনে সফল দেশ সংখ্যা আরও কম।
গায়ানার পর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে চীন ও ভিয়েতনাম যারা সাতটির মধ্যে ছয়টি খাদ্য উপাদানে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বিশ্বে প্রতি সাতটি দেশের মধ্যে মাত্র একটি দেশ পাঁচটির বেশি উপাদানে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
অন্যদিকে ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ খাদ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও, ছোট দ্বীপরাষ্ট্র, আরব উপদ্বীপের দেশসমূহ এবং নিম্নআয়ের অনেক দেশ এখনও আমদানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ম্যাকাও, কাতার ও ইয়েমেন যাদের একটিও খাদ্য উপাদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জোনাস স্টেহল বলেন, স্বয়ংসম্পূর্ণতা না থাকলেই যে তা নেতিবাচক কিছু, তা নয়। অনেক সময় কোনো দেশের প্রাকৃতিক পরিস্থিতি খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষ উৎপাদক দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করাটাই বেশি কার্যকর হতে পারে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা না থাকলে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় যেকোনো ধাক্কা যেমন যুদ্ধ, খরা বা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা একটি দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের পর খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ড. স্টেহল বলেন, এই আগ্রহের পেছনে রয়েছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান এবং বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা।’ তার মতে, ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।’

Side banner