চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম আগামী শুক্রবার ঘোষণা করা হবে। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল আলোচনায় রয়েছে একজনের নাম। তিনি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। বহুদিন ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের আকাঙ্খা প্রকাশ করে আসছেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। বিজয়ীর নাম ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন তিনি। এবার ইসরায়েল ও হামাসের মাঝে প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসানে নিজের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি পরিকল্পনার সঙ্গে এই বিষয়টিকে যুক্ত করেছেন তিনি।
নিজেকে বরাবরই একজন ‘চুক্তিকারী’ ও ‘বৈশ্বিক মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে তুলে ধরা ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, তার কূটনৈতিক বিভিন্ন উদ্যোগ; বিশেষ করে ২০২০ সালের ‘আব্রাহাম চুক্তি’ এবং সাম্প্রতিক ‘গাজা শান্তি চুক্তির রোডম্যাপ’ তাকে এই পুরস্কারের যোগ্য করে তুলেছে। তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নোবেল পুরস্কারের প্রক্রিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন প্রকাশ্য ও আক্রমণাত্মক প্রচারণায় ট্রাম্পের পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রতি আগ্রহ নতুন নয়। হোয়াইট হাউসে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই তিনি প্রকাশ্যে দাবি করে আসছেন, তার পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য কয়েকজন পূর্বসূরির মতোই স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার।
গত মাসে জাতিসংঘে কূটনীতিকদের এক সভায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘সবাই বলেন, আমার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।’ এর আগেও অসংখ্যবার তিনি একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট প্রায়ই দাবি করেন, তিনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। বিশ্বজুড়ে ‘সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন’ এবং গাজায় শান্তি চুক্তি হলে সেটি হবে তার ‘অষ্টম সাফল্য।’
ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকো মেরিন কর্পস ঘাঁটিতে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মতো এমন কাজ কেউ কখনোও করেননি। তাহলে আপনি নোবেল পুরস্কার পাবেন? অবশ্যই না। তারা দেবে এমন কাউকে, যে কিছুই করেনি।’
ট্রাম্পের এসব মন্তব্য তার আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি নোবেল কমিটির প্রতি হতাশারও বহিঃপ্রকাশ; যারা তার অর্জন উপেক্ষা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জনের এই প্রয়াস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একধরনের লবিং অভিযানে রূপ নিয়েছে। যেখানে রয়েছে সমর্থনপত্র, আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন এবং শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নির্ধারণকারী দেশ নরওয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগও।
শান্তির নোবেল জয়ের জন্য ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে তার গাজা শান্তি পরিকল্পনা। ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করায় সম্প্রতি এই শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনায় গাজা উপত্যকা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার, জিম্মিদের মুক্তি এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গাজা পুনর্র্নিমাণের কথা বলা হয়েছে।
এই পরিকল্পনা তিন ধাপে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, এরপর ইসরায়েলের আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার, এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বিভিন্ন গোষ্ঠী নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হবে এবং পুনর্গঠন সহায়তায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মেনে নেবে। ট্রাম্পের দাবি, ইসরায়েল ইতোমধ্যে সৈন্যদের প্রাথমিক প্রত্যাহারের সীমারেখা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
তাত্ত্বিকভাবে এই প্রস্তাব স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দিতে পারে বলে মনে হলেও যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা অনেক জটিল। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার দিনই গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহ দেখালেও পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়নি; যা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রধান শর্ত।
শান্তি চুক্তি নিয়ে মিসরে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চললেও ওই অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা নগরীতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং পশ্চিম তীরের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তবে এটির বাস্তবায়ন ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ তা বাস্তবায়নের পথে নানা ধরনের রাজনৈতিক ও কৌশলগত বাধা রয়েছে।
প্রত্যেক বছর নরওয়ের পার্লামেন্টের নিযুক্ত পাঁচ সদস্যের নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নির্বাচন করে। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ গোপনীয়: শত শত ব্যক্তি ও সংস্থা প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও কমিটির আলোচনা ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়।
বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রপ্রধান, সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পূর্ববর্তী নোবেল বিজয়ীরা মনোনয়ন দিতে পারেন। ২০২৫ সালে মোট ৩৩৮ জন মনোনীত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজনের নাম প্রকাশ পেয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে ট্রাম্প মনোনয়ন পেয়ে আসছেন এবং সমর্থকরা এবারও তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নিউইয়র্কের রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস সদস্য ক্লাউডিয়া টেনি চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত করেছেন। ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তিতে নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে মনোনীত করেছেন ক্লাউডিয়া।
প্রত্যেক বছরের পুরস্কারের জন্য ১ ফেব্রুয়ারির সময়সীমার আগে মনোনীতদের নাম জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ক্লাউডিয়া গত ফেব্রুয়ারির আগেই ট্রাম্পের নামে মনোনয়ন দেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, পাকিস্তানের সরকার এবং কম্বোডিয়ার নেতাদের মনোনয়ন সেই সময়সীমা পেরিয়ে যায়। ফলে এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদের মনোনয়ন বিবেচনা করা হবে না।
পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মনোনয়নে বলা হয়েছে, ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রেখেছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের সব মনোনয়ন টেকেনি। কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা না জানানোয় ট্রাম্পের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন ইউক্রেনীয় এক সংসদ সদস্য।
ট্রাম্পের সহযোগীরাও তার পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ নরওয়েজীয় নোবেল কমিটিকে ‘বাস্তবতায় ফিরে এসে’ ট্রাম্পের কৃতিত্ব স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পকে পুরস্কার না দেওয়া হলে তা হবে আমেরিকার জন্য বড় অপমান। এই প্রচারণা কেবল কূটনীতিতেই সীমাবদ্ধ নেই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। আর ট্রাম্প নিজেও নরওয়ের অর্থমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন।
করপোরেট দুনিয়ার নির্বাহীরাও ট্রাম্পের নোবেল আকাঙ্ক্ষায় সায় দিয়েছেন। ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলবার্ট বুরলা কোভিড-১৯ মহামারির সময় ট্রাম্পের ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, এটি টিকা তৈরির গতিকে ত্বরান্বিত এবং ভাইরাস শনাক্তকরণের সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
বুরলার মতে, এমন উদ্যোগও নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকাশ্য লবিং কার্যক্রম ট্রাম্পের জন্য হিতে-বিপরীত হতে পারে। কারণ নোবেল কমিটি সবসময়ই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীন সিদ্ধান্তে অটল থাকতে চায়।
ব্যাপক প্রচারণা আর লবিং চলমান থাকলেও আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নোবেল ইতিহাসবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের নোবেল জয়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। নোবেল কমিটি স্বল্পমেয়াদী সমঝোতা কিংবা একতরফা ঘোষণা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেয়।
হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক থিও জেনু বলেন, স্বল্পমেয়াদে যুদ্ধ থামানো আর সংঘাতের মূল সঙ্কটের সমাধানের মাঝে বিশাল পার্থক্য আছে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের সংঘাতপূর্ণ বক্তব্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি সংশয় নোবেল কমিটির পছন্দের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জেনু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করাটাও ট্রাম্পের অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে। কারণ নোবেল কমিটি জলবায়ু ইস্যুকেও বৈশ্বিক শান্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে দেখে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, নোবেল কমিটি বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার এমন কাউকে দেবে না; যিনি জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বাসই করেন না।
‘‘অতীতের বিজয়ীদের দিকে তাকালে দেখা যায়, ওই নেতারা সেতুবন্ধন রচনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পুনর্মিলনের প্রতীক হিসেবে হাজির হয়েছেন। আর এসবের কোনোকিছুই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যায় না।’’
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেন, ট্রাম্পের প্রকাশ্য প্রচারণা উল্টো ফল দিতে পারে। কমিটি রাজনৈতিক চাপের কাছে নত হতে চায় না। এই বছর ট্রাম্পের পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তার বক্তব্য শান্তির দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে না।
নোবেল শান্তি পুরস্কার যে একেবারে বিতর্কমুক্ত, বিষয়টি তেমনও নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৯ মাস পর নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। যা নিয়ে সেই সময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
সমালোচকরা বলেন, ওবামা তখনও বিশ্বের কোথাও বাস্তব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনও উদ্যোগই নিতে পারেননি। পরবর্তীতে কমিটির সাবেক সচিব গেইর লুন্ডেস্টাড তার স্মৃতিকথায় স্বীকার করেন, ওবামার কূটনৈতিক অ্যাজেন্ডাকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে আংশিকভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ফল মেলেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওবামাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সেই বিতর্ক এখনও কমিটির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। বিশ্লেষকদের ধারণা, বর্তমানে নোবেল কমিটি এমন যেকোনও সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলবে, যা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বা অকালপ্রসূ বলে মনে হতে পারে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি প্রযোজ্য।
ট্রাম্প নিজেও বারবার ওবামার সঙ্গে নিজের তুলনা টেনেছেন। তিনি শান্তির জন্য অনেক বেশি কাজ করেছেন বলেও দাবি করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমার নাম ওবামা হতো, আমি ১০ সেকেন্ডেই নোবেল পেতাম।’
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেটিং সংস্থা বলেছে, চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌড়ে রয়েছেন কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী। এই পুরস্কারের তালিকায় ২০২৪ সালে কারাগারে মারা যাওয়া রুশ বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়াকে প্রধান প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুদানে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ মোকাবিলায় কাজ করা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবিক সংস্থাকেও সম্ভাব্য প্রার্থী ধরা হচ্ছে। বাজিকরদের হিসেবে নোবেলের সম্ভাব্য বিজয়ীর তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন ট্রাম্প। কিন্তু বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এসব পূর্বাভাসের সঙ্গে বাস্তব ফলাফলের খুব একটা মিল পাওয়া যায় না।
সর্বশেষ সরকারপ্রধান হিসেবে ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য তাকে ওই বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ইথিওপিয়া ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে; যা সেই পুরস্কারের স্থায়িত্ব ও কমিটির নির্বাচনী মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
নোবেল কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হলেও তাদের সিদ্ধান্তে মাঝে মাঝে নরওয়ে সরকারের ওপর আসা কূটনৈতিক চাপের প্রভাব পড়ে। ট্রাম্পকে এবার পুরস্কার দেওয়া না হলে তা ওয়াশিংটনের সঙ্গে নরওয়ের সম্পর্কে টানাপড়েন বৃদ্ধি করতে পারে বলে নোবেল কমিটির অনেকেই উদ্বিগ্ন।
ইতোমধ্যে নরওয়ের সার্বভৌম তহবিল গাজা যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলি কিছু প্রতিষ্ঠান ও মার্কিন কোম্পানি ক্যাটারপিলার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। নরওয়ের এই পদক্ষেপের পর যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়; যা অসলোকে আরও অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, নোবেল কমিটি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীন। তারপরও এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পুরস্কার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কূটনৈতিকভাবে বিব্রতকর হতে পারে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রথমবার দেওয়া হয় ১৯০১ সালে। পুরস্কার বিজয়ী পান একটি স্বর্ণপদক, সনদ ও ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১১.৯ লাখ মার্কিন ডলার) অর্থমূল্য। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও স্বীকৃতিও পান বিজয়ীরা।
ট্রাম্পের জন্য এটি কেবল নোবেল জয় নয়; বরং তার পররাষ্ট্রনীতি ও ‘বিশ্ব পুনর্গঠনকারী আলোচক’ হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি প্রমাণেরও বিষয়। কে বা কারা পাচ্ছেন শান্তির এই পুরস্কার, নোবেল কমিটির সেই সিদ্ধান্ত আগামী শুক্রবার নরওয়ের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় জানতে পারবে বিশ্ব।
সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস, ব্লুমবার্গ, এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস।
আপনার মতামত লিখুন : :