• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

সাহিত্যে নোবেল পেলেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম সাহিত্যে নোবেল পেলেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সুইডিশ একাডেমি তাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে। 
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তার মনোমুগ্ধকর এবং দূরদর্শী কাজের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যা অ্যাপোক্যালিপ্টিক আতঙ্কের মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে। 
রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলাতে ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন লেখক লাসলো।
মধ্য ইউরোপীয় মহাকাব্যিক লেখক-ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পরিচিত লাসলো। তার সাহিত্যকর্মে বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক কাফকা থেকে শুরু করে থমাস বার্নহার্ডের মতো লেখকদের ছাপ পাওয়া যায়।
লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলাতে জন্মগ্রহণ করেন। অনুরূপ একটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলই হলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের প্রথম উপন্যাস সাতানটাঙ্গোর (১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত) প্রেক্ষাপট। এই উপন্যাসে হাঙ্গেরির গ্রামীণ এক পরিত্যক্ত সমবায় খামারে বাস করা একদল দরিদ্র মানুষের কথা বলা হয়েছে। সমাজতন্ত্রের পতনের ঠিক আগমুহূর্তে যারা অনিশ্চয়তা ও নিরাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এই উপন্যাসটি হাঙ্গেরির সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই লেখকের ব্রেকথ্রু কাজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এই উপন্যাস।
আমেরিকান সমালোচক সুজান সোনট্যাগ লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স (১৯৮৯ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ১৯৯৮) পড়ে ক্রাসনাহোরকাইকে বলেছিলেন সমসাময়িক সাহিত্যের ‘অ্যাপোক্যালিপসের মাস্টার’।
এই উপন্যাসে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের চিত্র আঁকা হয়েছে। কার্পাথিয়ান পাহাড়ে অবস্থিত একটি ছোট শহর, যেখানে একটি প্রেতাত্মাসদৃশ সার্কাস শহরে প্রবেশ করে, যার মূল আকর্ষণ একটি বিশাল তিমির মৃতদেহ। এই উদ্ভট এবং আশঙ্কাজনক ঘটনা শহরের ভেতর নানারকম ধ্বংসাত্মক শক্তিকে উসকে দেয়। সহিংসতা, অরাজকতা এবং সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা শহরটিকে এক স্বৈরাচারী অভ্যুত্থানের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। লেখক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে নৃশংস দ্বন্দ্ব, যা থেকে কেউই মুক্ত নয়।
এরপরের উপন্যাস ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার-এ (১৯৯৯ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ২০০৬) লেখক হাঙ্গেরির সীমানার বাইরের প্রেক্ষাপটকে বেছে নিয়েছেন। এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো একজন সাধারণ আর্কাইভ কর্মচারী। যিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নিউইয়র্কে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন। 
এই উপন্যাসের ধারা থেকেই জন্ম নিয়েছে লেখকের উপন্যাস ‘ব্যারন ভেঙ্কহেইম’স হোমকামিং’ (২০১৬ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ২০১৯)। এই উপন্যাসে চরিত্রটি তার মাতৃভূমিতে (হাঙ্গেরি) ফিরছে। জুয়ার আসক্তিতে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এক জমিদার বহু বছর আর্জেন্টিনায় কাটিয়ে হাঙ্গেরিতে ফিরে আসছে নিজের শৈশবের প্রেমকে খুঁজতে। তবে তাঁর সফরসঙ্গী ‘দান্তে’ একটি ছলনাময় চরিত্র। দান্তে তাঁকে বিপথে নিয়ে যায়।  
এই লেখকের সাম্প্রতিকতম বই হেরস্ট ০৭৭৬৯ (২০২১ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ২০২৪)-এর দৃশ্যপট পূর্ব জার্মানির থুরিঙ্গিয়ার একটি ছোট শহর। সমসাময়িক বাস্তবতা ও সামাজিক অস্থিরতায় পরিপূর্ণ এই শহর। গল্পের আবহে আছে সঙ্গীতঙ্গ বাখ-এর সঙ্গীত ও ঐতিহ্যের ছায়া। এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র উপন্যাসের শেষে বুঝতে পারেন, তিনিও সেই ধ্বংসাত্মক শক্তিরই অংশ হয়ে গেছেন, যাদেরকে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন।  
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাফকা এবং টমাস বার্নহার্ডের প্রভাব দেখা যায়।  লাসলো ক্রাসনাহোরকাই মধ্য ইউরোপীয় ঐতিহ্যের একজন মহাকাব্যিক লেখক। লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার ধরণ উদ্ভট। তাঁকে নোবেল কমিটি বলেছেন ‘চিন্তাশীল, সূক্ষ্মভাবে পরিমিত স্বর গ্রহণকারী’।
সূত্র: নোবেল কমিটির ওয়েবসাইট

Side banner