ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে নির্ধারিত সীমানার বাইরে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার মরিচাকান্দি সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৩টি ড্রেজার আটক করে ভ্রাম্যমান আদালত। পরে নগদ ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: রবিউল হাসান ভূইয়া এই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভাষ্য, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জনৈক মিজানুর রহমান (৪০) কে ছয় লক্ষ টাকা অর্থদন্ড আদায় করা হয়।
এর আগে এলাকাবাসী উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর মরিচাকান্দি, কানাইনগর, শান্তিপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে কয়েকদিন যাবৎ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও নদী ভাঙ্গনের প্রতিবাদ করে করে আসছিলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দীর্ঘদিন যাবৎ মেঘনা নদীতে (মরিচাকান্দি সীমানায়) বালু মহলে অপটিক্যাল সার্ভের সীমা অতিক্রম করে প্রায় শতাধিক ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালু উত্তোলন করলে মেঘনার তীরবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা তাদের বাড়ি ঘর মেঘনায় ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একযোগে ৬টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার করে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত লোডিং ড্রেজারগুলোকে বন্ধ করার জন্য বাঁধা প্রদান করে। একপর্যায়ে ড্রেজার মালিক পক্ষ প্রতিরোধের মুখে দুরে সরে চলে যায়।
ঘটনার জের ধরে গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে মেঘনার পাশ্ববর্তী শান্তিপুর গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে লক্ষ্য করে বালু উত্তোলন পক্ষের লোকজন ব্যাপক গোলাগুলি করে আতংক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শান্তিপুর গ্রামের লোকজন অস্ত্রধারীদেরকে পাল্টা ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। অস্ত্রধারীদের গুলিতে এই গ্রামের সেজন মিয়ার ছেলে মরিচাকান্দি ডিটি একাডেমির ১০ম শ্রেণির ছাত্র ইয়ামিন (১৭) গুলিবিদ্ধ হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তার পরিবারসূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা থেকে উন্নত চিকিৎসা নেয়।
এই প্রতিনিধিকে গুলিবিদ্ধ ইয়ামিন জানান, আমি চুল কাটার জন্য বাজারে যাওয়ার সময় একটি গুলি এসে পায়ে লাগে। কে গুলি করেছে, আমি দেখিনি। গুলি পায়ে ঢুকে মাসল দিয়ে বেরিয়ে গেছে বলে ডাক্তার নিশ্চিত করেছে। আমি শয্যাশায়ী, এই ঘটনার বিচার চাই।
বালু মহালের ইজারাদার আবদুল কাইয়ুম জানান, এলাকার কিছু ব্যক্তি ড্রেজারের উপর হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করে। আমরা প্রতিরোধ করি। ইয়ামিনকে কারা গুলি করেছে আমাদের জানা নেই।
এদিকে, শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা সাব মিয়া (৬৫) সহ এলাকাবাসী মাইকে ঘোষনা দিয়ে বলেন, সীমানার বাইরে যেয়ে বালু উত্তোলন করলে, যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় আমরা গ্রামবাসী তা প্রতিহত করবো।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর একটায় সরেজমিনে বালুমহালের ছবি তোলা ও সংবাদ সংগ্রহে গেলে, বাঞ্ছারামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোল্লা মো. নাসির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শামীম শিবলীসহ ৫ সাংবাদিকের উপর হামলা করে বালু মহালের লোকজন। এঘটনায় বাঞ্ছারামপুর প্রেসক্লাব চরম নিন্দা জানিয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসান জামিল খান বলেন, এক কিশোরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুনেছি। তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মরিচাকান্দিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহ পুলিশ অবৈধ স্থানে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযান চালিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন : :