আমার বাবা প্রয়াত আব্দুল হাকিম বিএসসি। তিনি সর্বশেষ বাঞ্ছারামপুর সরকারি এস এম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। আমি বাবার ছোট ছেলে। বাঞ্ছারামপুরে আমার বাবাকে সবাই মাক্কু মাস্টার নামেই বেশী চিনে। আমাদের পরিবারে আমরা ছিলাম মোটে পাঁচজন, আম্মা (লায়লা মাশরেকী), আব্বা, আর আমরা দুই ভাই (আমি আর আমার বড় ভাই জসীম মোহাম্মদ টুটুল), একটি মাত্র বোন (নাহিদ সুলতানা লিপি)। আমার আম্মা পরিবার পরিকল্পনায় দীর্ঘকাল সরকারী চাকুরী করে বর্তমানে অবসরে আছেন। আমার আব্বা, পেশায় ছিলেন মাধ্যমিক স্কুলে বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক। জীবনের বেশীরভাগ সময় ছেলে মেয়েদের পড়িয়েই পার করে দিয়েছেন। তবে আব্বা কিছুদিন সোনালী ব্যাংকেও চাকুরী করেছিলেন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে আমার বাবার শিক্ষকতা পেশার শুরুটা হয়েছিল বাঞ্ছারামপুর বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারপর সিলেটের গোলাপগঞ্জে, ফরদাবাদ এবং সবশেষে বাঞ্ছারামপুর এস এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে উনার শিক্ষকতা জীবন শেষ করেছেন। শিক্ষক হিসাবে আমার বাবা ছিলেন অসাধারণ। কারণ, উনি স্কুলের হেন কোন বিষয় নেই যার উপরে উনার জবদস্ত জ্ঞানের আধিক্য ছিল না। আমার বাবা বলেই এমন কথা বলছি তা নয়, এটা আব্বার পরিচিত সর্বজন বিদিত। উনার অন্যতম আদর্শের মধ্যে একটা ছিল যে উনি যতটুকু জানেন ততটুকু স্কুলের শ্রেণীকক্ষেই ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে দিয়ে আসবেন। শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো আব্বা পছন্দ করতেন না। নেহায়েত ই আর্থিক প্রয়োজনে কালে-ভদ্রে কিছু ছাত্রদের উনি বাসায় পড়িয়েছিলেন। বাঞ্ছারামপুর এসএম পাইলট স্কুলে ৮ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত আমি আব্বা’র ক্লাস পেয়েছি। আব্বা দারুণ করে ক্লাসে পড়াতেন, ঐ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা অবশ্যই আমার থেকে ভাল বলতে পারবেন।
একজন মুসলিম হয়েও সংস্কৃত ভাষায় বেদ, বাংলা এবং ইংরেজী ভাষায় মহাভারত, গীতা, রামায়ণ ইত্যাদিতে উনার জ্ঞানের পরিধি রীতিমত ঈশ্বণীয় ছিল। পবিত্র আল-কোরানের উপর ছিল বেশ দারুণ দখল, ইসলামী ইতিহাস, রাজনীতি, দর্শন জ্ঞানশাস্ত্র, ভাষার ব্যাকরণগত বৈচিত্রতার ব্যাখ্যা, সংগীতের মৌলিক থেকে আধুনিক সকল স্তরে, খেলাধূলার আদ্যোপান্ত ইত্যাদি বিষয়ে উনার মতো জ্ঞানী মানুষ আমার জীবদ্দশায় আমি এখনও খুব বেশী একটা দেখিনি। রূপসদীর মতো অঁজপাড়া গাঁয়ে থেকেও নিজেকে কিভাবে চিন্তা-চেতনায়, মেধায়-মননে আধুনিক রাখা যায় সেটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন আমার বাবা। নিজের আত্মসম্মানের জন্য কারও কাছে মাথা নত না করাই ছিল উনার আদর্শের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ছোটবেলা থেকেই ছাত্র হিসাবে ছিলেন তুখোর মেধাবী। অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা রাখেন নি, যদিও উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে (যে বিভাগ থেকে আমি অনার্স এবং মাস্টার্স শেষে বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে শিক্ষকতা করছি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। বিএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করে তার পাট চুকিয়ে দিলেন, পরিবার নামক এক মহাযজ্ঞের জোয়াল তুলে নিলেন কাঁধে। সেই শুরু, তারপর মৃত্যু অবধি জোয়াল কাঁধ থেকে নামানোর ফুরসত হয় নি আমার বাবার।
আব্বা খুব সাদা-মাটা সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তবে খুব সৌখিন, সংস্কৃতিমনা, সংগীত প্রেমী এবং বই পোকা ধরণের মানুষ ছিলেন। এই প্রতিটা বিশেষণের যথাযথ মাপে উনি ছিলেন যথাযোগ্য। সৌখিন এই জন্য বলছি যে, যখন উনাদের পরিবারে দু-বেলা ঠিক মতো খেতে না পারার সময় গেছে, তখন উনি এবং উনার ভাই (আমার একমাত্র চাচা জনাব আবদুল হামিদ যিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৬ মাস হলো) গ্রামোফোনে করে উস্তাদ মেহেদী হাসান, তালাত মাহমুদ, নূর-জাহান এবং লতা মুঙ্গেশকরের গান শুনতেন। সেই গ্রামোফোনটি এখনও আমাদের বাসায় আছে, রেকর্ডগুলোও আছে তবে সময়ের ফেরে রেকর্ডগুলোতে কাটা পরে গেছে।
আব্বাকে হারিয়েছি ২০১৮ সালে। কিন্তু বাবার সাথে স্মৃতির পলিমাটি জমতে জমতে সেটা পাহাড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। আমি সেই স্মৃতির পাহাড়েই খুঁজে বেড়াচ্ছি আব্বাকে। খুঁজে বেড়াচ্ছি আব্বার সাথে বলা না বলা কতশত কথার মালা, স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছি আমার প্রিয় বাবার। আমার মনে আছে ২০১৩ সালের কথা। ঐ বছর আমি আমার স্ত্রী, রাজ্য এবং আমার শাশুরী মাস তিনেক এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান কালেই মায়ের মুখ থেকে শুনেছি আব্বার শরীরটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেছে। আব্বাকে আমাদের গ্রামের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই হাসপাতালটা নতুন হয়েছে নাম “মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতাল”। আমাদের গ্রামের একটা পরিবার তাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় নিজেদের গাটের টাকা খরচ করে বিরাট হাসপাতাল তৈরি করেছেন। উদ্দেশ্য গ্রামের মানুষ যেন কম টাকায় ভাল মানের চিকিৎসা সেবা পায়। তারই ধারাবাহিকতায় তারা সপ্তাহে দুই দিন ঢাকার বড়বড় ডাক্তারদের নিয়ে যান গ্রামে। আমরা কম খরচে ভাল চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি ঘরের কাছে। আর সর্বদা দেখা শোনা করার জন্য নানা ধরনের ডাক্তার তো রয়েছে। হাসপাতালে একটা নার্সিং স্কুল তৈরি করছেন। সামনে আরও অনেক পরিকল্পনা আছে। আল্লাহ তাদের মনোবাসনা পূরণ করুন, আমীন, আমীন।
আমাদের পরিবারে আব্বা হচ্ছেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন, প্রথম ছিল রাজ্য (গত বছর ঈদুল আযহার আগে আগে)। আব্বার এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরটা শুনে শরীরের ভেতর যেন কেমন একটা অনুভুতি হলো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল, নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছিল। মনে হচ্ছিল এই মুহুর্তে আকাশে উড়ে যাওয়া কোন একটা প্লেনকে টেনে নিচে নামিয়ে ফেলি আর দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পাইলটকে বলি, রকেটের গতিতে ছুটে চলো, কোথাও থামবে না, সোজা আমাদের বাড়ির সামনে এসে আমাকে প্যারাস্যুটে করে নামিয়ে দাও। যাক অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক যেদিন বাংলাদেশে আসার কথা ছিল তার একদিন আগেই চলে এলাম। সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় ফিরলাম স্ত্রী, পুত্র আর শাশুরীকে নিয়ে। তারপর ৮টা নাগাদ বারডেম হাসপাতালে চলে এলাম আব্বাকে দেখত, কারণ ইতিমধ্যে আব্বার অসুস্থতা আমাদের গ্রামের হাসপাতালের সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে গেল আর আব্বাকে জরুরী ভিত্তিতে নিয়ে আসা হলো ঢাকায়। আব্বা এখন কিছুটা সুস্থ আছেন, তবে বেশ দূর্বল হয়ে গেছেন। ভাবতে অবাক লাগে যে হাত আমাকে হাঁটতে শিখিয়েছে, আমাকে কলম ধরতে শিখিয়েছে, যে পায়ে করে আব্বা মাইলে পর মাইল আমাকে কোলে করে, কাঁধে করে হেঁটে বেড়িয়েছেন, যে চোখ দিয়ে আমাকে দেখিয়েছেন দূরের তারার গতিপথ, সেই হাত আজ নিজের চলার পথ খুঁজতে অন্যের দ্বারস্থ হচ্ছে! সেই চোখ আজ আর ভাল করে দেখতে পারছে না, সেই পা আজ আর নিজের ভার সইতে পারছে না! আব্বাকে দেখে আজ ভেতরটা যেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি বয়স, এই বুঝি বার্ধক্য, এই বুঝি একজন টকবগে তরুণের বাবার চেহারা, এই বুঝি একটা ছোট্ট শিশুর দাদুভাই, এই বুঝি আমার বাবা।
ঐ একটি রাত আমি বারডেম হাসপাতালে থাকছি। এতদিন মা ছিলেন আব্বার সাথে, রাত জেগে জেগে মা কিছুটা ক্লান্ত। মাকে বিশ্রাম দেবার এবং সেই সাথে আব্বাকে সেবা করার প্রয়াস থেকেই আমার হাসপাতালে যাওয়া। আব্বা ঘুমাচ্ছেন, আমি রাত জেগে এই কথাগুলো লিখছিলাম। হঠাৎ করে ওয়ার্ডের পাশে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। কান্নার ধরণ দেখে মনে হলো কারও খুব কাছে খুব আপন কেউ বুঝি তাদের রেখে চিরতরে বিদায় নিয়ে গেলো। সবাই কাঁদছে, সাময়িক সময়ের জন্য লিখা বন্ধ করে আমি ছুটে গেলাম পাশের ওয়ার্ডে। হ্যাঁ, তাদের মা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কি কষ্টের তাই না! উনার ছেলে মেয়েরা কাঁদছিল আর বলছিলো আর কখনও দেখতে পাবে না মাকে, আর কখনও মা বলে ডাকতে পারবে না, কেন চলে গেল? ইত্যাদি ইত্যাদি... পরিবেশটা ভারী হয়ে গেছে তাদের কান্নার আওয়াজে। আমিও কেমন যেন একটা জ্বালা চোখে অনুভব করলাম, পরক্ষণেই দেখি চোখের কোণে এক ফোঁটা পানি জমে গেছে নিজের অজান্তে। যারা কাঁদছে তাদের চিনিও না, যিনি মারা গেছেন তাকেও তো আমি চিনি না, তবে কেন এই চোখ ভিজে গেছে? উত্তর খুঁজেছিলাম লিখতে লিখতে, আমি অনুভব করলাম এ যে “মা” সার্বজনিন একটা সম্পর্ক, সব কিছুর উর্ধ্বে, সব উত্তরের উপরে, সকল ব্যাখ্যার অতীত, সকল অজানার জানা, সকল অচেনার চেনা...। আব্বা ঘুমাচ্ছিলেন, ঠিক যেন একটা ছোট্ট শিশু ঘুমাচ্ছে, যেমন করে রাজ্য ঘুমায়, কাচুমাচু হয়ে বিছানায় জড়িয়ে আছে উনার শরীর। চামড়ায় আর আগের সেই টানটান ভাবটা নেই, একটু যেন চিপসে গেছে, শরীরটা যেন একটু ছোট হয়ে গেছে। পাশে বসে আছি আমি অপলক নয়নে তাঁকিয়ে রই আব্বার দিকে, আর ভাবছি বহু কথা, বহু ছবি, বহু স্মৃতি...
আজ ৯ই মার্চ, গুনে গুনে ঠিক ৩ বছর হলো। ২০১৮ সালের মার্চ মাসের ৯ তারিখ শুক্রবার, এই দিনেই আব্বা আমাদের রেখে এই পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের শেষভাগে ফজরের কিছু আগে আগে হয়তো, আমাদের আব্বা ঘুমের মধ্যেই এই পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অনন্ত এক জীবনের উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের কাছে আমার আব্বা নিশ্চয়ই ভাল আছেন, বরযাখে আল্লাহ অবশ্যই আমার বাবাকে শান্তিতে রেখেছেন। হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন (সূরাঃ বণী ইসরাইল, আয়াতঃ ২৩-২৫)।
আমার খুব ইচ্ছে হয়, আব্বাকে একটু ছুঁয়ে দেখি, আব্বার মাথার চুল টেনে দিয়ে তাকে কিছুটা আরামের স্বাদ দেই। আমার মনে আছে সেই ছোট বেলায়, আব্বা যখন শুক্রবারে কিংবা ছুটিরদিনে একটু আরাম করে, আয়েশ করে দেরীতে ঘুম থেকে উঠতেন। তখন বেলায় ৮টা কিংবা ৯টার দিকে আমাকে ডাকতেন “শিমুনু রে, আব্বা আয় তো এখানে, আমার পিঠটা একটু টেনে দে তো!” আর আমি যখন পিঠ টেনে দিতাম, আব্বা তখন আরামের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে নানান রকমের শব্দ আওরাতেন “এহ, খুব আরাম লাগছে রে আব্বা, আমার শিমুনু রে, আমার বুলবুলি রে”।
মাঝে মাঝে আব্বাকে দেখতে পাই, গভীর ঘুমের আচ্ছন্ন থাকা এই আমার চোখে ভেসে উঠে আমার জীবন্ত বাবা। কথা হয় আব্বার সাথে, আমি দেখি আব্বা এটা করছেন, ওটা করছেন, কখনও আদর করছেন আবার কখনও দেখছি পরিবারের কোন কাজে ব্যস্ত। ঘুম ভেঙ্গে খুঁজতে থাকি আব্বার অবস্থান, আব্বার স্পর্শ। ভাবতে থাকি কেন ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, কেন আরও একটু ঘুমাতে পারলাম না। খুব আফসোস হয়, কতো কথাই তো হতো আব্বার সাথে কিন্তু আব্বা’কে কখনও বুকে জড়িয়ে বলতে পারি নি “আব্বা, আপনি আমাদের জন্য জীবনে যারপর নাই কষ্ট করেছেন, নিজে না খেয়ে হলেও আমাদের খাবারের সংস্থান, আমাদের চাহিদার ষোলআনা ঠিক রেখেছেন। আমি আপনাকে খুব ভালবাসি আব্বা” এই কথাগুলো বলতে পারলাম না।
যাক, আব্বার শেষ সময়টাতে আমি কাছে থাকতে পারি নি এই কষ্ট আমাকে আজীবন তাড়া করে বেড়াবে। নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারব না। আব্বার শেষ সময়টাতে আমি অস্ট্রেলিয়ায়। মোবাইলের ছোট্ট স্ক্রীনে ইমো এবং মেসেঞ্জারে আব্বাকে দেখছি, শুয়ে আছেন, কিছুটা কথা বলছেন, খুব কষ্ট হচ্ছে। কোন এক সময়ে আব্বার সাথে কথা বলতে চেয়েছি, আব্বা তিনবার আমাকে ডেকেছেন-আব্বা, আব্বা, আব্বা, প্রতিবারই খেয়াল করেছি উচ্চারণের ভেতরে অদম্য আকাঙ্খা আমাকে ছুঁয়ে দেখার, আমি সেই ভাষা পড়তে পেরেছিলাম। আবেগে, চিন্তায় যতটা পথ যত নিমেষে পার হওয়া যায়, বাস্তবতায় সে পথ বেশ কঠিন, বেশ দূরের। চোখ বন্ধ করলেই আব্বার কাছে যাওয়া যায়, কিন্তু সেই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। আমি আব্বাকে ঠিকই দেখলাম, কিন্তু নিথর, নিস্তেজ। আমি আব্বাকে ছুঁইয়ে দেখলাম কিন্তু কোন তাপ অনুভব করি নি, খুব ঠান্ডা। আমি আব্বাকে ছুঁইয়ে দেখলাম কিন্তু আব্বার নরম তুলতুলে গালটা, নরম তুলতুলে হাতটা যেন ঠান্ডায় জমে কাঠ হয়ে গেছে। যে চোখ আমার দিকে অপলক তাঁকিয়ে ভালবাসা আর স্নেহের নিরন্তর ঝর্ণা বইয়ে দিত, আমি যেতে যেতে সেই চোখের পাতা নেমে গেছে চিরকালের মতো, আমি আব্বাকে দেখলাম কিন্তু আব্বা আর আমাকে দেখতে পেলেন না! আমি আব্বাকে দেখলাম কিন্তু সাদা একফালি কাপড়ে মোড়ানো। পুরোটা শরীর সাদা কাফনে মোড়ানো, শুধু মুখটুকু খুলে রেখেছেন যেন উনার শিমুনুটা সেই মুখখানা শেষবারের মতো দেখতে পারেন। মনে আছে শেষবারের মতো আব্বাকে দেখলাম পশ্চিমে মুখ করে দিলেন সবাই, ঢেকে দিলেন বাঁশের ফালিতে আমার বাবার সারাটা শরীর, তারপর.........
আপনার মতামত লিখুন : :