• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
সেবাবঞ্চিত সাধারণ মানুষ

বোদায় চেয়ারম্যানের পর ৮ ইউপি সদস্য কারাগারে


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার জুন ১৭, ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম বোদায় চেয়ারম্যানের পর ৮ ইউপি সদস্য কারাগারে

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরী ইউনিয়নের পাবনা পাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন মানিক। তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার কলির ভোটার এলাকার পরিবর্তন করতে শনাক্তকারী হিসেবে ইউপি সদস্যের এনআইডি নম্বর, স্বাক্ষর ও সিল প্রয়োজন। এজন্য এসেছেন ইউনিয়ন পরিষদে। কিন্তু ইউপি সদস্য দাহির উদ্দিন কারাগারে থাকায় সেবা না পেয়ে তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে। মানিকের মতো অনেকেই সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই সব ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে ওই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ। অফিস করছেন সচিব ও উদ্যোক্তারা। চেয়ারম্যান-মেম্বার না থাকায় তাদের কার্যালয়ের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
জানা গেছে, গত ৮ মে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন রাজনীতিক মামলায় আটক হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছে। এদিকে, গত ২৬ মে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্ডের চাল বিতরণে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগে ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন ইউপি সদস্যকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে তাদেরকে আদালতে তোলা হলে ১১ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে ৩ জন নারী সদস্যকে জামিন দেন আদালত। একজন ইউপি সদস্য পলাতক আছেন।
এ ঘটনার পর পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৩, ১০১ ও ১০২ ধারা অনুযায়ী বোদা উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রায়হান মুজিবকে ঝলই শালশিরী ইউনিয়নের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করেন।
সেবা নিতে আসা সুরিয়া ধরধরা এলাকার গোপাল রায় বলেন, আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধন বাংলা থেকে ইংরেজি করতে পরিষদে এসেছি। সব কাজ হয়ে গেছে এখন শুধু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর লাগে। চেয়ারম্যার-মেম্বার সবাইতো জেলে। এখন নাকি বোদা থেকে অফিসার এসে স্বাক্ষর দেবে। দুই ঘণ্টা ধরে তার জন্য বসে আছি, কখন যে আসে। চেয়ারম্যার-মেম্বার থাকলে তো সহজে হয়ে যাইতো।
শালশিরী গ্রামের অলিউর রহমান বলেন, আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন কাগজ নিতে আসছি। সব কাজ হয় গেছে চেয়ারম্যার-মেম্বার নাই এজন্য সই নিতে পারতেছি না। অফিসে বলল একজন দায়িত্বে আছেন তিনি এলে সই করবেন। তিনি যে কখন আসেন।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নাই, মেম্বার নাই, এই মুহূর্তে আমরা কার কাছে যাব, কার কাছে বিচার দেব। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। এটার একটা সমাধান করার দরকার।
ঝলই শালশিরী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা আরিফ হোসেন বলেন, আমরা বর্তমানে ওয়ারিশন সনদ দিতে পারতেছি না। ওয়ারিশন সনদ ইউপি সদস্যরা যাচাই বাছাই করেন। যাচাই না করা পর্যন্ত ওয়ারিশন দেওয়া সম্ভব না। এছাড়া মাতৃত্বকালীন যে যাচাই বাছাই করতে হয় এটাও আমরা করতে পারতেছি না। কারণ যাচাই-বাছাই করতে গেলে আমাদের কমিটি সদস্যদের প্রয়োজন। এখন কমিটির কোনো সদস্য না থাকার কারণে যাচাই-বাছাই হচ্ছে না।
ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সফিউর রহমান বলেন, জনগণ যেন ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে এজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছি। কিছু কিছু সেবা আপাতত বন্ধু আছে। এর মধ্যে ওয়ারিশন সার্টিফিকেট বন্ধ আছে। আর প্রত্যয়নের ক্ষেত্রে ওই ওয়ার্ডের প্রধান শিক্ষক, ঈমাম, পুরোহিত আছেন উনাদের আইডেন্টিফাই অনুযায়ী আমরা দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রায়হান মুজিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, ঝলই শালশিরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার সবার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা চলমান থাকায় তারা জেলখানায় আছেন। একজন পলাতক আছেন। এই মুহূর্তে আমরা সেখানে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছি।  সরকারের কোন নির্দেশনা পেলে ওই ইউনিয়নের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

Side banner