ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালানোর পর দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষায় সাবেক স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়। আশ্রয়কারীদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন রাজনীতিবিদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ বিষয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর বিবৃতিতে জানায়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব-বিচারকসহ সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল। আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ২৪ জন রাজনীতিবিদ, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু)। সেসময়ে তাদের আশ্রয় প্রদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করা।
আশ্রয়গ্রহণকারীদের বেশিরভাগই এক দুই দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং এর মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ/মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এতে আরো জানানো হয়, সেনানিবাসে অবস্থানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যাপারে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট আইএসপিআর আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। একই দিন ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য ব্যতীত) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যা একটি মীমাংসিত বিষয় ছিল।
আইএসপিআর জানায়, তৎকালীন নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষীমহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয়গ্রহণকারী ৬২৬ ব্যক্তিবর্গের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্যসহ) প্রকাশ করা হয়েছে। তাই সবাইকে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সঙ্গে জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।
আশ্রয় প্রাপ্তরা হলেন- সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, তৎকালীন এমপি সায়েদুল হক সুমন, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তৎকালীন এমপি নাজমা আকতার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক টুকু, তৎকালীন এমপি ছোট মনির, তৎকালীন এমপি ইকবালুর রহিম, তৎকালীন এমপি শাজাহান খান, বগুড়া-৬ এর তৎকালীন এমপি রাগিবুল আহসান রিপু, বগুড়া-৪ এর তৎকালীন এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, বগুড়ার তৎকালীন এমপি জাকির হাসান, তৎকালীন এমপি এমএ লতিফ, মাদারগঞ্জের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুব আলম, সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, পিএস টু এমপি সুজন সাত্তার, খুলনা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বাগেরহাট-৪ এর তৎকালীন এমপি হাবিবুন নাহার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম রফিউদ্দিন আহমেদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম ফয়সাল আহমেদ রানা, মিঠামইন উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান শরিফ কামাল, তৎকালীন মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ-৩ এর তৎকালীন এমপি মো. আবু জাহির।
আপনার মতামত লিখুন : :