দেশের চলমান পরিস্থিতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নানা পক্ষের প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতায় তাঁর সরকার কাজ করতে পারছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ অবস্থায় তাঁর দায়িত্বে থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত তিনজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার দুই কর্মকর্তা এবং ছাত্রনেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক শেষে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বেলা ১১টায় উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শুরুর কথা ছিল। তবে আগের রাতে প্রধান উপদেষ্টা তা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে এক ঘণ্টা নিয়মিত সভা হয়। এরপর সচিবরা বেরিয়ে যান। উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অনির্ধারিত বৈঠক করেন ড. ইউনূস। দু’জন উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা শুরুতে বলেন, রাজনৈতিক দলসহ কেউ সরকারকে প্রতিশ্রুত সহযোগিতা করছে না। এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে চাপ তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হবে। এর দায় নিতে রাজি নন তিনি।
বিকেল থেকে এই আলোচনা ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন’ হিসেবে ডালপালা মেলে। বিকেল ৪টায় বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের পথনকশার দাবি জানায়, অন্যথায় সরকারকে সহযোগিতা করা কঠিন হবে বলে মত দেয়। বিকেল ৫টার দিকে জামায়াতে ইসলামী দলের নির্বাহী কমিটির সভা করে এবং সর্বদলীয় সভা ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানায়। সন্ধ্যায় এনসিপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। গণমাধ্যমকে তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে তারা পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর চলমান আন্দোলন থেকে আজ দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। পরে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপি এ দুই উপদেষ্টাসহ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানেরও অব্যাহতি দাবি করেছে।
বিএনপির এই দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা। তবে তা ‘সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে’। এই তিনজন হলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, বিএনপি এবং এনসিপি অধৈর্য হয়ে গেছে। সরকার রাজনৈতিক দল ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমর্থনকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু উপদেষ্টা নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায় দায়িত্বপূর্ণ আচরণ না করায় সরকারের সংকট তীব্র হয়েছে। করিডোর, বন্দরের মতো বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে সরকার সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলেছে।
পদত্যাগের গুঞ্জনে নমনীয় বিএনপি
আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ পাওয়া বিএনপির ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা সপ্তাহখানেক ধরে রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে রাতদিন অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ইশরাকের শপথ স্থগিত চেয়ে করা রিট গতকাল দুপুরে খারিজ করেন হাইকোর্ট। এরপর ইশরাক ঘোষণা দেন– দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। রাজপথে অবরোধ আরও বিস্তৃত হবে।
আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি বদলে যায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খবর আসতে থাকে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ইশরাক ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের ইতি টানেন। এর কিছু পর শাহবাগ মোড় অবরোধের কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদল। সংগঠনটির নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে গত রবিবার থেকে কর্মঘণ্টায় শাহবাগ অবরোধ করে আসছে ছাত্রদল। গতকাল অবরোধ তুলে নেওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দেয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আদালতের রায়ের পরও অবরোধ চালিয়ে যাওয়া ইশরাকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল। দল থেকে পরে নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি সরে যান।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা করে এসেছে এতদিন। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে সহযোগিতা করবে কিনা ভেবে দেখবে। তবে ড. ইউনূস বা সরকারের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যমুনায় ছাত্রনেতারা
সরকারপ্রধানের পদত্যাগের ভাবনার কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়ালে সন্ধ্যায় যমুনায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা।
নাসীরুদ্দীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে যমুনায় গিয়েছিলাম। ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি আর দায়িত্বে থাকতে চান না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা পূরণে তাঁকে সরকার প্রধান হিসেবে থাকতে হবে বলে বুঝিয়েছি। তিনি ভাববেন বলে জানিয়েছেন।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রনেতাদের আচরণ সংযত নয়। এ নিয়েও সকালের বৈঠকে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের এমন কিছু বলেননি।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন বলে জানা গেছে। তবে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে একই সময়ে গিয়েছেন, নাকি আলাদা গিয়েছেন, নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পদত্যাগের আলোচনা
উপদেষ্টাদের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে অবিশ্বাস করায় ড. ইউনূস হতাশা প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন বিষয়কেও নির্বাচনী ইস্যু করে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে এটা তিনি বারবার বলছেন। জুনের পর এক দিনও থাকবেন না। কিন্তু কোথাও যেন অবিশ্বাস রয়ে গেছে।
বিএনপি নেতাদের অনেকেই গত কয়েক মাস ধরে খোলাখুলি অভিযোগ করছেন, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় সরকারের কেউ কেউ। মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার আলোচনাকেও নির্বাচন বিলম্বের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, এমন একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে আমি নাকি দেশ বিক্রি করে দিচ্ছি! এ অপবাদ নিয়ে থাকতে চাই না।
উপস্থিত একজন উপদেষ্টা জানান, বৈঠকে এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার জন্য জাতির উদ্দেশে ভাষণের একটি খসড়া তৈরি করা হয়। তাতে সব পক্ষের প্রতি কিছু বার্তা প্রস্তাব করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাতেও হতাশা জানান এবং বলেন, তিনি ছেড়ে দিতে চান।
বৈঠক সূত্র জানায়, এ সময় অন্তত চার উপদেষ্টা বলেন, তারাও অপবাদ নিয়ে থাকতে চান না। তবে অন্য উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা এই সরকারের জাতির প্রতি দায়িত্ব রয়েছে। এই অস্থিতিশীল সময়ে সরকার বিদায় নিলে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এই দায়ও সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের ওপরেই বর্তাবে।
এ পর্যায়ে অধ্যাপক ইউনূস উপদেষ্টাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মতামত দিতে বলেন। তিনি বলেন, সরকার থাকবে কিনা, তা উপদেষ্টারাই ঠিক করবেন।
সীমারেখায় আবদ্ধ থাকা সম্ভব নয়
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে মানবিক করিডোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে। করিডোর দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দিতে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান। তিনি জানান, কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনাও করা হয়নি।
আবার বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচন চায়। তারাও মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সীমারেখা টেনে বলা হচ্ছে এর বাইরে যাওয়া যাবে না। স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে সরকারে থাকার দরকার নেই। উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বন্দরকে স্মার্ট করতে চেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এই সময়ে বৈঠকে একজন উপদেষ্টা এনসিটির বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের মালিক তরফদার রুহুল আমিনের সঙ্গে বিএনপির এক নেতার টেলিফোন আলাপের প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের বিনিয়োগ রয়েছে বন্দরে। তারাই প্রচারণা চালাচ্ছে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনার কাজ দিতে আলোচনা শুরু হয়।
নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের শঙ্কা
রাজনৈতিক চাপের কারণে কিছুই করা যাচ্ছে না বলে জানান উপদেষ্টারা। তারা একে একে অভিযোগ করেন, কাজ করতে কোথায় কী প্রতিবন্ধকতায় পড়ছেন। ড. ইউনূস তখন বলেন, কোথাও কিছু করা যাচ্ছে না; সব কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সরকারের মূল লক্ষ্য হলেও প্রশাসনসহ সব কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ায় ভোট নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
বৈঠকে বলা হয়, নির্বাচন বিতর্কিত হলে নোবেলজয়ী হিসেবে ড. ইউনূসের সারাজীবনের অর্জিত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। ড. ইউনূস জানান, এই দায় তিনি নিতে চান না।
কাজের স্বীকৃতি নেই, অন্যায্য ‘ট্রল’
সূত্রমতে, ড. ইউনূস বৈঠকে বলেছেন, গত ৯ মাসে সরকার ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতিকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। বহু বছরের বৈষম্য-বঞ্চনা দূর করেছে। কিন্তু কোনো ভালো কাজের জন্য সরকারের প্রশংসা করা হয়নি। চারদিক থেকে শুধু সমালোচনা চলছে। সরকার যেসব ভুল করেনি, সেগুলোরও সমালোচনা চলছে।
এ সময় একজন উপদেষ্টা অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, পুলিশ বিমানবন্দর থেকে ওই অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তারের পর সরকারের করণীয় কিছুই ছিল না। মামলা থাকায় পুলিশ আদালতে নিয়েছে। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর জামিনের বিরোধিতা করেন। এমন সব অভিযোগ আনেন, যা সরকার চায়নি। কিন্তু সরকারকে ট্রল সইতে হয়েছে।
একজন উপদেষ্টা বলেন, সেন্টমার্টিন রক্ষায় পর্যটক সীমিত করা হয়েছে। এ নিয়েও ট্রল হচ্ছে। কথা রাখছে না দলগুলো
বৈঠকে উপদেষ্টারা বলেন, ঠুনকো ইস্যুতে রাস্তাঘাট বন্ধ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মব, গুজব সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সংস্কারে বড় রাজনৈতিক দলের অনীহা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের অনুরোধে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। দলগুলো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কথা দিয়েছিল আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। কিন্তু এখন অস্থিরতা তৈরি করেছে। মানুষের আশা পূরণ করতে দিচ্ছে না। জনদুর্ভোগ তৈরি করছে। যে কোনো ইস্যুতেই রাস্তা অবরোধ করছে।
আরেক উপদেষ্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি নিজ পেশায় ভালো ছিলেন। অভ্যুত্থানের নায়করাও এখন কথায় কথায় আন্দোলন করছেন, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর। যারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারাই সহযোগিতা করছেন না। সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে সরে যাওয়া উচিত।
রাজনৈতিক দল কী বলছে
বৈঠকের পর উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে লেখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে অতীতে বিভাজনমূলক কথার জন্য দুঃখিত।
সরকারের পদত্যাগ গুঞ্জনের মধ্যে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষকে মান, অভিমান ও ক্ষোভ একদিকে রেখে, জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই।’ বিকেলে দলের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিএনপি বলি কিংবা এনসিপিকে বলি, তাদের অধৈর্যের ফল হচ্ছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি। গত কয়েক দিনে যেটা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়েছে। এখন সমাধানে আসতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও জনগোষ্ঠীর সমর্থনকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার নিরপেক্ষ হলেও শুরু থেকে তারা নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নিরপেক্ষতা প্রমাণে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ দায়িত্বপূর্ণ আচরণ না করায় সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। অন্য কোনোদিকে না তাকিয়ে এখনই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। সরকার এটা করতে ব্যর্থ হলে আরও বড় সংকটে পড়তে পারে দেশ।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সরকার এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে করিডোর, বন্দরে হাত দিয়ে সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলছে।
আপনার মতামত লিখুন : :