• ঢাকা
  • সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা

মানবিক করিডর সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩১, ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম মানবিক করিডর সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি

প্রতিবেশী মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যদি কোনো করিডর দেওয়া হয় তা দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এ বিষয়ে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত মানবিক করিডর’ শীর্ষক সবার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যানালিসিস। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.) মো. জগলুল আহসান। লিখিত বক্তব্যে তিনি রাখাইনে দেওয়া মানবিক করিডর নিয়ে পাঁচটি সুবিধা এবং ৭টি অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।
সুবিধা গুলোর মধ্যে রয়েছে— করিডর প্রদানের মধ্য দিয়ে এর পৃষ্ঠপোষক দেশ বা সংস্থার সাথে জোর সম্পর্ক স্থাপন করে এই এলাকার অন্য দুই বড় শক্তির আধিপত্য মোকাবেলা করা যাবে; বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে; আরাকান আর্মির সঙ্গে যদি একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবে তা ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের সহায়ক হবে; জাতিসংঘের বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে; রোহিঙ্গার নতুন ঢল বন্ধ করা সম্ভব হবে।
আর ঝুকিগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরাশক্তি দেশগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পড়বে; এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে বাংলাদেশর স্থল ও আকাশপথে ঝুঁকিতে পড়বে; ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের চরম অবনতি হতে পারে; করিডর দেয়া মানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি, অস্থিরতা, সংঘাত ও এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত হতে পারে; এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নানান ভূ-রাজনৈতিক কূটকৌশলের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে, ফলে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সম্পূর্ণ গোপনে এই কাজটা করার কথা বলা হলো। এতে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।
জাতিসংঘ বলল দুটি সার্বভৌম দেশ যদি না চায় তাহলে তাদের এখানে আসারই সুযোগ নাই। এখানে জাতিসংঘের আসারই সুযোগ নাই। পুরো বিষয়টা নিয়ে এতো গোপনীয়তা কেন? কী আছে এর মধ্যে? এটা দেয়ার এখতিয়ারই তো নেই এই সরকারের। আরাকান আর্মির অনেক কিছু দরকার। নেপিডোর চেয়েও তারা খারাপ।
তারা আমাদের দেশে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে। এতে তো আমাদের সারভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। আমরা কোনো প্রক্সি ওয়ারে যাব না। এটা আমরা ধারণ করতে পারব না। আমরা একটা স্থিতিশীল দেশ চাই। আমরা কী অন্য দেশের স্প্রিং বোর্ডে পরিণত হব?
তিনি বলেন, হাসিনা যেমন ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য সবকিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করে অন্য রাষ্ট্রের ইন্টারেস্ট সার্ভ করেছে আপনি কি (ড. ইউনুস) সেদিকে যাচ্ছেন? এখানে কোন চ্যানেল বা করিডর যাওয়ার কোন সুযোগ নাই বাংলাদেশ এটা ধারণ করতে পারবে না। যেটা করতে হবে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে রাখাইনে ফেরত নিতে হবে। এটা আমাদের অস্তিত্বের ব্যাপার। আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ব্যাপার। সেটা কি আপনি এতো বড় ঝুঁকির দিকে নিয়ে গিয়ে কী অর্জন চাচ্ছেন? আরাকান আর্মির কয়েকবার আমাদের দেশে চলে এসেছে। সেখানে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার অথচ তারা করিডর দিতে চাচ্ছে? এখানে একটা বাফার জোন তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা; সেখানে করিডর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এসব কিন্তু এই সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তাদের উচিত একটি নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়া। সব কিছু করা হচ্ছে, অথচ নির্বাচনের জন্য কোনো কথা বলা হচ্ছে না। তামাশা দেখার জন্য মানুষ এতো স্যাক্রিফাইস করেছে? নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করা হচ্ছে না অথচ সবকিছুই করা হচ্ছে। 
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, করিডর যদি দেয়া হয় তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে কে আমি মনে করি বাংলাদেশ এটা পারবে না। আমাদের কত বড় একটা নিরাপত্তার ব্যাঘাত হবে! সরকারের এ রকম গোপন এজেন্ডা সম্পর্কে জনগণের সতর্ক হতে হবে। এ রকম সিদ্ধান্ত আসতে হবে সংসদ থেকে, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। অনেক পার্টি বলেছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। আমাকে যদি বলে তাহলে বলব ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এখানে জাতিসংঘ ও বিশ্বের পরাশক্তি গুলোর একটা স্বার্থ আছে। কিন্তু আমাদের স্বার্থটা কি। আমাদের স্বার্থ হচ্ছে এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। আমরা আর একটা রোহিঙ্গা কেউ গ্রহণ করতে চাই না। 
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার এখানে কোন একটা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। কোন কিছু ঢেকে রাখার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছ থেকে কিছু আদায় করার জন্য এরকম বেপরোয়া সিদ্ধান্ত আমরা লক্ষ্য করছি। এই মানবিক করিডরের সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে তাই এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে নির্বাচিত সরকার গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, সরকার এখানে সমাজের কারো সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। আমরা সরকারকে বলতে চাই আপনার যতদূর এগিয়েছেন অনেক করেছেন মেহেরবানী করে এই তৎপরতা বন্ধ করুন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, করিডর দেওয়ার বিষয়ে অনেক চিন্তা করা দরকার। তবে আমরা এটার সমর্থন করি না।
সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, এখানে বিদেশি কোনো দেশের ইন্টারেস্ট আছে। এই করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌম হুমকির মুখে পড়বে।
গোলটেবিল আলোচনাসভায় আরো বক্তব্য রাখেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন প্রমুখ।

Side banner