কোরবানির পশুর অন্যতম হলো উট। সামর্থ্যবানদের কেউ কেউ এই প্রাণী দিয়ে কোরবানি করেন। কিন্তু অনেকে এই প্রাণী কোরবানি করার সুন্নত পদ্ধতি জানে না। অনেকে এই প্রাণী অন্যান্য প্রাণীর মতো শুইয়ে জবাই করে থাকেন।
ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুসারে, উটকে দাঁড় করিয়ে নহর করা সুন্নত। এর বিবরণ হাদিসে এসেছে। বিভিন্ন হাদিসে নবীজি (সা.)-এর নিজ হাতে উট নহর করার কথা বর্ণিত হয়েছে। সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তিনবার হজ করেছেন, হিজরতের আগে দুবার এবং হিজরতের পরে মদিনা থেকে একবার (যা বিদায় হজ নামে প্রসিদ্ধ)।
শেষোক্তটি তিনি কিরান হজ করেছেন- অর্থাৎ একত্রে হজ ও উমরার ইহরাম বাঁধেন। এ হজে নবী (সা.) যতটি কোরবানির পশু এনেছিলেন এবং আলী (রা.) যতটি পশু এনেছিলেন তার মোট সংখ্যা ছিল এক শ। এর মধ্যে একটি উট ছিল আবু জাহেলের, যার নাসারন্ধ্রে রুপার লাগাম আঁটা ছিল। নবী (সা.) স্বহস্তে ৬৩টি এবং আলী (রা.) অবশিষ্টগুলো কোরবানি করেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৭৬)
উটকে অন্যান্য প্রাণির মতো জবাই করা সুন্নতসম্মত নয়। হাদিসে এসেছে, জিয়াদ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি ইবনে উমার (রা.)-এর সঙ্গে মিনায় ছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে তার উটকে বসানো অবস্থায় জবাই করতে প্রস্তুত হচ্ছিল। তিনি বলেন, এটিকে ছেড়ে দাও এবং বেঁধে দাঁড় করিয়ে জবাই করো। এটাই মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত।
(আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৬৮)
পবিত্র কোরআনেও মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উটকে দাঁড় করিয়ে জবাই করার শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো, যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবি মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবি চেয়ে বেড়ায়, তাদের খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৬)
উট নহরের পদ্ধতি
নহরের পদ্ধতি হলো, উট দাঁড়ানো অবস্থায় প্রথমে তার সামনের বাঁ পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে মজবুত করে বেঁধে নেবে। অতঃপর ধারালো ছুরি দিয়ে উটের সিনার কাছে গলার নিচের অংশে শক্তভাবে একটি আঘাত করে গলার রগগুলো কেটে দেবে। ফলে কিছুক্ষণ ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকবে। অতঃপর উটটি বাঁ দিকে পড়ে যাবে। তারপর নড়াচড়া বন্ধ হওয়ার পর অন্যান্য যবাইকৃত প্রাণীর মতো চমড়া খসিয়ে বাকি কাজ সেরে নেবে।
একান্ত কেউ নহর করতে না জানলে বা অন্য কোনো অসুবিধার কারণে নহর করার স্থলে উট জবাই করলেও কোনো ক্ষতি নেই। কোরবানি হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে নহর করার পর শব্দ করে চিৎকার করতে ও লাফাতে পারে, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যাবে। (মিশকাত ১/২৩১, বুখারি ১/২৩১, নারীদের হজের বিধান, মিরকাত ৫/৩৫৩, হিদায়া : ৪/৪৩৯, আজিজুল ফাতাওয়া ১/৭১৭)
আপনার মতামত লিখুন : :