রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘অনাকাঙ্খিত ও অপ্রীতিকর’ বলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ)। আর হামলার ঘটনার সঙ্গে দলের দুই কর্মী ‘জড়িত থাকায়’ দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
রবিবার (১ জুন) দিবাগত রাতে রংপুর স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠক শেষে দুই সংগঠনের নেতারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এর আগে, রাত ৯টার দিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠক করতে যান বিএনপির রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ, সদস্য সচিব রহমত আলী, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, সদস্য সচিব জামিল আহমেদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫-২০ সদস্য।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, আমরা আনন্দিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির প্রতিনিধিরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এখানে এসেছেন। তাদের যেসব কর্মী ও সহযোদ্ধা আবেগে হোক বা যে কোনো কারণেই হোক আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিছু কর্মকাণ্ড করেছিলেন। আমরা তাদের চিহ্নিত করার সুযোগ দিয়েছিলাম। তারা নিজে থেকে এসেছেন। তারা এ রকম আর কিছু করবেন না ভবিষ্যতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করব, তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেটা নিয়মের মধ্যে পড়ে সেভাবে চালিয়ে যাবেন। কিন্তু কোনো ধরনের ভাঙচুর, কোনো কিছু নষ্ট করা, মবের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করবেন না। এসব কর্মকাণ্ড শুধু রংপুরে কেন, বাংলাদেশের কোথাও করার সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, জাতীয় পার্টির কারও বিরুদ্ধে ভাঙচুর বা হামলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর জাতীয় পার্টির কেউ হামলা করে থাকলে সেটার তথ্য প্রমাণ সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, দুই দিন আগে রংপুরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের অঙ্গসংগঠনের দুজন সদস্য এই ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সরি বলেছেন। আমরা মনে করি, তারা যেহেতু ভুল বুঝেছেন, ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটাবেন না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি দাবি করেন, গত ২৯ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী এর ওপর হামলা চালান। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় অনেকেই আত্মরক্ষার্থে ইটের টুকরো ও গাছের ডালপালা হাতে নিয়েছিল। এ রকম একটি অনাকাঙ্খিত ও অপ্রীতিকর ঘটনায় রংপুরে উত্তেজনা বিরাজ করে।
ইমতি আরও বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নিশ্চিত করেছি, এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রংপুরে যেন আর না হয়, এ জায়গা থেকে সচেতন থাকব। কিন্তু কেউ যদি রংপুরকে অস্থিতিশীল করতে উঠে পড়ে লাগে, তাহলে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে সবসময় আমরা প্রস্তুত আছি।
বৈছাআর রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের মিছিলে হামলা হয়েছে। এই জায়গায় আত্মরক্ষার্থে হয়তো ছোটাছুটির মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে বা আমাদের কেউ সাংঘর্ষিক অবস্থানে ছিল না। এই বিষয়ে আমরা সেনাকর্মকর্তাকে বলেছি এবং তথ্য-প্রমাণও দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছে জাতীয় পার্টি। সাবেক মেয়র গত ২৯ মে আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছে। তিনি তার পদে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। সেই মিছিলে আওয়ামী লীগের পলাতক কাউন্সিলরদের স্ত্রী এবং তাদের লোকজন ছিলেন। তারা অতীতের মতো এখনো আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে জাতীয় পার্টির। দেশের জনগণের মতামতও সেই দিকে যাচ্ছে। আমাদের অবস্থানও দেশের মানুষের পক্ষে থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাইভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। হামলার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।
জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার (৩১ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর নগরীর পায়রা চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ এবং বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। এ সময় হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে তাদের কাছে সহযোগিতা চায় সেনাবাহিনী। সেখানে বৃষ্টির মধ্যেই উপস্থিত হন সারজিস আলম। তিনি ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রাত ২টার দিকে সেখানে থেকে চলে যান।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান।
আপনার মতামত লিখুন : :