ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর রফিকুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার (৬ মে) তাকে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক থেকে নিজকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ পরিচালক (প্রাথমিক শিক্ষা) মো. আতাউর রহমান বদলীর আদেশ দেন। যার স্মারক নং ৩৮.০১.২০০০.০০০.১৯.০০৩.২২-৮৩৪।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) উশিআ/বাঞ্ছা/ব্রাহ্মণ/২০২৫/৭১৪ নং স্মারকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রতিবেদনের আলোকে মীর রফিকুল ইসলামকে বদলী করা হয়। এতে পুরো উপজেলায় শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে অন্যতম একজন ভাল শিক্ষক হিসেবে পরিচিত মীর রফিকুল ইসলাম। তিনি ২০০০ সালের ৫ জুন সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তার প্রথম কর্মস্থল বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে তিনি সুনামের সাথে চাকুরী করেন। তারপর ২০০৩ সালের ১৫ মার্চ সরাসরি নিয়োগে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উপজেলার চরছয়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ওই বিদ্যালয়ের সময় ব্যতিত শিক্ষার্থীদের সকাল বিকাল ও রাতের বেলায় নিজ দায়িত্বে রেখে পাঠদানের মাধ্যমে ২০০৪ সালে দীর্ঘ ১৪ বছর পর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ৫টি বৃত্তি পাওয়াতে সক্ষম হয়। পরের বছর ২০০৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৭ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি লাভ করেন। একই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৮টি বৃত্তি ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০০৬ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০০৭ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ১২টি বৃত্তি ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক -২০০৭ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০০৮ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ১৫টি বৃত্তি ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০০৮ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় গাইবান্ধা জেলার সুন্দর উপজেলার শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালায় যোগদান করেন।
ওই সময় বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় থাকায় উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস ২০০৯ সালে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের জন্য মীর রফিকুল ইসলামকে বদলী করেন। তিনি বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ের সময় ব্যতিত শিক্ষার্থীদেরকে সকাল-বিকাল ও রাতের বেলায় নিজ দায়িত্বে রেখে পাঠদানের মাধ্যমে ২০০৯ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ৬টি বৃত্তি এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়নে সরকার ঘোষিত সকল কাজে সন্তুষ্ঠ হয়ে সরকার ২০১০ সালে ইঁরষফ ঈধঢ়ধপরঃু ড়ভ উচঊ ঐবধফ ছঁধঃবৎ ধহফ ইবংঃ চবৎভড়ৎসরহম ঋরবষফ খবাবষ ঙভভরপবৎং ধহফ ঞবধপযবৎং প্রশিক্ষণে মালয়েশিয়া পাঠান।
বাঞ্ছারামপুরের আদর্শ শিক্ষক মীর রফিকুল ইসলামের কারণেই ২০১০ সালে ৭টি বৃত্তি, ২০১১ সালে ৫টি, ২০১২ সালে ১১টি, ২০১৩ সালে ১৯টি, ২০১৪ সালে ১২টি, ২০১৫ সালে ৭টি, ২০১৬ সালে ৯টি, ২০১৭ সালে ৮টি, ২০১৮ সালে ১৫টি ও ২০১৯ সালে ১০টি বৃত্তি পায় মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে ১৪টি বৃত্তি এবং তাছাড়া ২০০৯ সাল ব্যতিত সবসময় শতভাগ পাশ করে ও ঝরেপড়া রোধ করে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সরকার বন্ধ করে দেয়। তিনি ২০০৯ সালে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬বার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় এবং ২০১৯ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের গৌরব অর্জন করে।
২০১১ সালে সরকার ঘোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এ ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে রানার্স আপ, ২০১৬ সালে জেলা চ্যাম্পিয়ন, ২০১৭ সালে রানার্স আপ, ২০১৮ জেলা, বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অর্জন করেন বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানেই শেষ নয়, ২০১৯ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আর এসবের পেছনের কারিগর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মীর রফিকুল ইসলাম।
২০২০ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে নবম বাংলাদেশ গেমস এ বালিকা অ-১৪ জাতীয় পর্যায়ে রানাস আপ হয়। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আয়োজনে আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। তাছাড়া ২০২২ সালে অত্র বিদ্যালয়ের ৩জন খেলোয়াড় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জাতীয় দলে খেলার সুয়োগ পায় এবং তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলে বাঞ্ছারামপুরের সুনাম অর্জন করে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিদফতরের আয়োজনে (অ-১৭) বালিকা ২০১৯ ও ২০২০ সালে জেলা চ্যাম্পিয়ন ও বিভাগীয় রানার্স আপ হয়। ২০২১ ও ২০২২ সালে জেলা ও বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ফলে ২০২২ সালে তৎককালীন জেলা প্রশাসন খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমন্টেকে সংবর্ধনা প্রদান করে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। আর এসব কারণেই বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন মীর রফিকুল ইসলাম।
বহুগুণে গুণান্বিত এই শিক্ষককে তার বাড়ি থেকে দূরবর্তী একটি স্কুলে বদলী করায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সুশীল সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক শিক্ষক বলেন, বাঞ্ছারামপুরে শিক্ষা ডিপার্টমেন্টে কাঁদাছুড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেছে। একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের পিছনে লেগে আছে আছে। যা শিক্ষা ক্ষেত্রে অশনি সংকেত। রফিক মাস্টারের পিছনে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে মীর রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি মানুষ গড়ার কারিগর। আমাকে যেখানেই পোস্টিং দেয়া হয় সেখানেই চাকরি করবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় মানুষ হিসেবে গড়তে চেষ্টা করবো। তবে কিছুটা কাছাকাছি পোস্টিং দেয়া হলে আমার জন্য উপকার হতো।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, মীর রফিকুল ইসলামের নামে অনেক অভিযোগ ছিল। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই বিভাগীয় উপ পরিচালক তাকে বদলী করেন।
আপনার মতামত লিখুন : :