ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়নে অনিয়ম, বৈষম্যে ও নীতিমালার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ৪০জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১জন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষাথীর সংখ্যা বেশী থাকলেও এই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক বেশী থাকার পরও সেখানে নতুন করে শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়কে ম্যানেজ করে পদায়ন হওয়া শিক্ষক/শিক্ষিকারা তাদের পছন্দের জায়গায় পদায়ন হয়েছেন। এতে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সকল কাজে ভূমিকা রেখেছেন বাঞ্ছারামপুরে কর্মরত সাবেক একজন উপজেলা শিক্ষা কমকর্তা। তিনি এখন জেলার অন্য একটি উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে বহু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ছোট শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় ভবিষ্যতে তাদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় মারাত্মক দুর্বলতা দেখা দেবে। শুধু শিক্ষার মান নয়, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত শিক্ষকের ভিড় হওয়া বিদ্যালয়ে কাজের চাপ কম থাকায় কিছু শিক্ষক দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে পড়েছেন। একদিকে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে কিছু বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের কারণে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ভিত্তিক চাহিদা নির্ণয়, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও, তারা কোনো নিয়ম মানেননি। নিজস্ব পছন্দ, ব্যক্তিগত লাভ এবং রাজনৈতিক চাপের কাছে নীতিমালা ও বিধিমালা বিসর্জন দিয়েছেন।
নারীদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিকটবর্তী এলাকায় (নিজের ইউনিয়ন অথবা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন) পদায়ন করার বিধান মানা হয়নি। অনেক নারী শিক্ষককে ২৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে, যা যাতায়াত ও নিরাপত্তার দিক থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এতে করে এই সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হবে।
পুরুষ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় দূরবর্তী এলাকায় পদায়নের নির্দেশনা থাকলেও, বাস্তবে ভিন্নচিত্র দেখা গেছে। কয়েকজন শিক্ষককে নিজের এলাকাতেই পদায়ন করা হয়েছে। আশ্রাফবাদ গ্রামের মো. আসিফ শিকদার সোহাগকে পাশের গ্রাম পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আইয়ুবপুর ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের শাহ আলীকে পাশের গ্রাম নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, কল্যাণপুরের ইমরান হোসেনকে একই ইউনিয়নের বাহেরচর উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কল্যাণপুরের মো. মোস্তাক আহামেদকে পাশ্ববতী খাসনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। এতে করে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রক্রিয়ায় বৈষম্যমূলক আচরণ এবং নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে অভিভাবক মহল। শিক্ষাখাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের মানসিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৪৫ সহকারী শিক্ষকের পদের বিপরীতে ১১২টি সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য ছিল। এই সকল বিদ্যালয়ের শুন্য পদ পূরণ করতে গত ১৩ মার্চ নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বিভিন্ন বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়। শিক্ষক সংকট যেখানে বেশি, সেই সকল বিদ্যালয়ে অগ্রাধিকার ভিওিতে শিক্ষক দেওয়ার বিধান থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি। ৬৪টি বিদ্যালয়ে ১১২টি সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য ছিল। অন্যদিকে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯টি বিদ্যালয়ে। একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য থাকলেও কোন নতুন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি। এই সকল বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জন শিক্ষককে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী হওয়াদের স্থলে প্রদায়ন করা হয়েছে। ৯টি বিদ্যালয়ে প্রদায়ন করা হয়েছে ২৭জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রদায়ন করায় এবং শুন্য পদ থাকা বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক না পাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার নগরীচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক থাকলেও সেখানে কোন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। অথচ এখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এতে করে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। নগরীচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩৯জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ৫টি পদ রয়েছে এই বিদ্যালয়ে। মাত্র ৩জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৬জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সহ ৭ পদ রয়েছে এই বিদ্যালয়ের। ৪টি শুন্য পদের বিপরীতে ৪জনকে পদায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে তাতুয়াকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৭জন, শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা অতিরিক্ত রয়েছে। উলুকান্দি উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯২ জন। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৭জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। কর্মরত ছিল ৫জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যানুযায়ী পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার পরও ১জন শিক্ষককে এই বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৮ম শ্রেণীর বিদ্যালয় দুইটি যা কিনা আগামী বছর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (৮ম শ্রেণী পর্যন্ত) শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিকে ২৪৯ ও মাধ্যমিকে ১১৭জন, প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিল ১০ জন। নতুন করে একজনকে এই বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়েছে। অথচ আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রম থাকবে না।
চরশিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রাথমিকে ৫১০জন ও নিম্ন মাধ্যমিকে ২৯৮জন। প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ে ১৩টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের ৫টি শুন্য পদে ৫জনকে পদায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রম থাকবে না।
শুটকিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২১ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিল ৫ জন। নতুন করে এখানে আরও একজন শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে শিক্ষক সংকট না থাকার পরও। ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৫ জন। এখানে কর্মরত ছিল ৩ জন। প্রধান শিক্ষকসহ ৩টি পদ শুন্য থাকলেও নতুন করে এখানে একজন মাত্র শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে শিক্ষক সংকট থাকার পরও। চরলহনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৮ জন, শিক্ষার্থীর জন্য ৪জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে আরও ১জন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন। আশ্রাফবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৯ জন, প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত রয়েছেন ৮জন, তারপরও এখানে একজন নতুন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়েছে।
ডোমরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৪ জন, প্রধান শিক্ষক সহ এখানে কর্মরত ছিলেন ৬ জন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও আরও একজন শিক্ষককে এ বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়েছে।
চরমানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০৩ জন। এখানে কর্মরত ছিল ৫ জন। প্রধান শিক্ষকসহ ৫টি পদ শুন্য থাকলেও নতুন করে এখানে একজন মাত্র সহকারী শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৪টি পদ শুন্য রয়ে গেছে। শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
দরিয়াদৌলত দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৮ জন, প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিল ৮ জন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে এখানে একজন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়েছে। শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩২ জন, এখানে কর্মরত ছিল ৪ জন, প্রধান শিক্ষকের পদসহ ২টি পদ শুন্য রয়েছে। শিক্ষক সংকট থাকার পরও এই বিদ্যালয়ে মাত্র ১জন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়েছে, তাও আবার প্রতিস্থাপনকৃত বদলী হয়ে থাকা শিক্ষককে ছাড় করার জন্য। বতমানে ২টি পদ শুন্য রয়েছে।
খাসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫৩ জন, প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিল চারজন। তারপরও নতুন একজন শিক্ষককে এখানে পদায়ন করা হয়েছে।
নিজকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৭ জন, এখানে কর্মরত ছিল তিনজন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক সহ ৩টা পদ শুন্য ছিল, সহকারী শিক্ষকের ২টি শুন্য পদের বিপরীতে একজন শিক্ষককে প্রদান করা হয়েছে। অথচ এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংকট রয়ে গেছে।
রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২৯ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন ৯ জন, শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে আরেকজন শিক্ষককে এই বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩২ জন, কর্মরত ছিলেন ৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ ৩টি পদ শুন্য ছিল। একজন সহকারী শিক্ষক অন্যত্র বদলী হওয়ায় প্রতিস্থাপন করতে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকের ১টি পদ শুন্য থাকা সত্ত্বেও এখানে শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি।
কড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩২ জন, প্রধান শিক্ষক সহ এখানে কর্মরত ছিল চারজন। প্রয়োজন না থাকার পরও নতুন করে এখানে একজন শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে।
দড়িকান্দি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩৭ জন, বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৬ জন। প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। একটি সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য থাকলেও শিক্ষকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখানে শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি।
শেখেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০ জন। প্রধান শিক্ষক সহ কর্মরত রয়েছেন ছয় জন, শিক্ষক সংকট থাকার পরও একটি পদ শুন্য থাকলো, এখানে কোন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি।
বাহেরচর উত্তর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১২ জন, প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিল ৪জন। বিদ্যালয়ের ৪টি শুন্য পদের বিপরীতে দুজনকে পদায়ন করা হলেও শিক্ষক স্বল্পতার রয়ে গেছে বিদ্যালয়টিতে।
বাহেরচর দক্ষিণ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১২ জন, প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন কর্মরত ছিল বিদ্যালয়ে। ৩টি শুন্য পদের বিপরীতে ১জনকে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতা থাকার পরও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি।
বাহেরচর পশ্চিম সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৬ জন, প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত রয়েছেন পাঁচজন, শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে এখানে আরো একজন শিক্ষককে প্রদান করা হয়েছে।
ভুরভুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এই বিদ্যালয়ে পদ সংখ্যা ৭টি। ৩টি পদ শুন্য ছিল। কর্মরত ছিল ৪জন। এখানে নতুন ৩জন সহকারী শিক্ষক পদায়ন করা হলেও প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী হয়ে থাকায় দুইজন শিক্ষক চলে যাওয়ায় বতর্মানে শিক্ষক রয়েছে ৫জন। শিক্ষক সংকট থাকার পরও শিক্ষক দেওয়া হয়নি এই বিদ্যালয়ে।
পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৮ জন, প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন কর্মরত ছিল বিদ্যালয়ে। ৩টি শুন্য পদের বিপরীতে ১জনকে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতা থাকার পরও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি।
উপজেলায় মেধা তালিকা প্রথম স্থান অধিকার করা জুয়েল রানাকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম মরিচাকান্দি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলার মেধা তালিকায় ৩য় (মেয়েদের মধ্যে প্রথম) হওয়া জাকিয়া হায়দারকে নিজ গ্রামের কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। পাহাড়িয়াকান্দি গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌসকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরের তাতুয়াকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষিকাদের নিকটবর্তী স্কুলে পদায়ন করার কথা থাকলেও ইচ্ছে মতো পদায়ন করা হয়েছে। অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন না করে শিক্ষক পদায়ন করার কারণে শিক্ষিক-শিক্ষিকারা হয়রানীর শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষিকাদের দূরবর্তী স্থানে পদায়ন করা হলেও কয়েকজন শিক্ষক তাদের পছন্দ মত জায়গায় পদায়ন হওয়ার এই বিষয়ে নানা রকম গুঞ্জন রয়েছে। এতে করে শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হবে।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া তাতুয়াকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার, আসা যাওয়া অনেক কষ্ট হয়, ভেঙে ভেঙে যানবাহন দিয়ে আসতে হয়। কাছাকাছি যদি আমাকে পোস্টিং দেয়া হতো তবে অনেক ভালো হতো। কারণ আসা-যাওয়ায় শারীরিক মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমস্যা পড়তে হচ্ছে। কাছে হলে হয়তো সবদিক দিয়ে ভালো হতো, আমিও আমার সর্বোচ্চটা দিতে পারতাম শিক্ষার্থীদের।
মেধা তালিকায় উপজেলার প্রথম জুয়েল মিয়া জানান, আমি মেধা তালিকা প্রথম হয়েছি। আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা, আমাকে নিকটবর্তী কোন স্কুলে আমাকে পদায়ন করবে এটা আমি ভেবেছিলাম, কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়েছে আমার গ্রাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে। অথচ অনেক শিক্ষককেই তাদের পছন্দ মত জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে। কি করার স্যাররা দিয়েছেন।
নগরীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদায়ন হওয়া শিক্ষক শাহ আলী জানান, আমি নতুন মাত্র চাকরি পেয়েছি তার উপর আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। আমি কাজের কিছুই বুঝিনা, আর বিদ্যালয়ে মাত্র তিন জন শিক্ষক, একদিকে পাঠদান অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে অফিসের কাজে উপজেলা অফিসে গেলে ক্লাসগুলো বন্ধ থাকে, এতে করে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, নতুন শিক্ষকদের পদায়ন করা হয়েছে ডিপিও স্যারের অফিস থেকে। আমরা শুন্য তালিকা পাঠিয়েছিলাম সেই হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট রয়েছে এমন কয়েকটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন না করে থাকলে আমার কিছু বলার নেই। কারণ ডিপিও স্যার এই পদায়ন করেছে এই বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। নগরীরচর ও ইছাপুর বিদ্যালয়ের বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলব।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমান জানান, নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। নগরীর চর, ইছাপুর বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি কথা বলব, প্রয়োজন অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক এনে তা পূরণ করা হবে। তাতুয়াকান্দিতে শিক্ষার্থী কম থাকার পর শিক্ষক দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি দেখব। আমি কারো কথায় এ সকল পদায়ন করিনি। যেখানে শিক্ষক দরকার, সেখানে আমি শিক্ষক দিয়েছি। তবে দু একটা ভুল হতে পারে। নারী শিক্ষকদের কাছে দেওয়ার বিষয়টি এবছর নেই, তাই যেখানে শুন্য পদ সেখানেই নারীদের দেওয়া হয়েছে। এতে সমস্যা হলে তো কিছু করার নেই। আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করছে এগুলো ফাও কথা। যোগাযোগ করলে কি আর দূরে পদায়ন করা হতো। এমনও শুনেছি অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, কাজ করতে না পারায় টাকা ফেরত দিতে হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন : :