ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভিডব্লিউবির বরাদ্দ হওয়া চাল বিতরণ না করে গুদামে রেখে ২২ জন সুবিধাভোগীকে এক মাসের বেশি সময় ধরে ঘোরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউপি কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ঘুরেও চাল দিচ্ছে না বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীদের। এদিকে দীর্ঘদিন গুদামে চাল পড়ে থাকার কারণে তা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে দাবি সুবিধাভোগীদের।
গত সোমবার বিকেলে ইউপি কার্যালয়ে চালের জন্য এসেছিলেন দেবেন পাল, আব্দুল জব্বার ও রুহুল আমিন। কার্যালয়ে কাউকে না পেয়ে ঘুরে গেছেন তাঁরা। জানতে চাইলে দেবেন পাল বলেন, পুত্রবধূ প্রতিমা রানী ভিডব্লিউবির সুবিধাভোগী। ওই তালিকায় থাকা ২২ জনকে বাদ দিয়ে সবাইকে কোরবানি ঈদের আগে চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের ঘুরাচ্ছে। আজ আসেন, কালকে আসেন। কিন্তু কী কারণে, কেন চাল দিচ্ছে না, সেটা কেউ পরিষ্কার করে বলছেন না।
অপর সুবিধাভোগী রুহুল আমিন বলেন, এর আগে ২৪ মাসের চাল উত্তোলন করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু গত মে মাসে একসঙ্গে পাঁচ বস্তা চাল সবাইকে দিলেও আমাকে দেয়নি। দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছে আজ-কাল করে।
আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা গরিব মানুষ, প্রতিদিন যাতায়াত করতে ভাড়া খরচ ও সময় নষ্ট হচ্ছে। চাল না দিলে বলে দিতে হবে, কিন্তু আশা দিয়ে ঘুরাচ্ছে কেন? ইউএনও অফিসে দুজন গিয়েছিলাম। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দেখিয়ে দিচ্ছে। এখানে এলে তিনি কথা কানে নিচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মে মাসে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ভিডব্লিউবি প্রকল্পের ৩শ’ ৫ জন সুবিধাভোগীর জন্য ১ হাজার ৪শ’ ২৫ বস্তা চাল ইউপি কার্যালয়কে হস্তান্তর করে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২শ’ ৮৩ জনকে ৫ বস্তা করে চাল বিতরণ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কিন্তু আটকে দেন ২২ জনের চাল। এরপর জুন মাসের ১ বস্তা করে চালের বরাদ্দ বুঝে পেয়েছে ভানোর ইউনিয়ন পরিষদ। এ মাসেও ২শ’ ৮৩ জনকে চাল বিতরণ করে বাকি চাল আটকে রাখা হয়েছে।
চাল মজুত রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন ভানোর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পর থেকে আমার পদের বিপরীতে সুবিধাভোগীদের চাল ডিও করছে কর্তৃপক্ষ। ২২ জনের নাম তালিকায় না থাকায় তাদের চাল আটকে দেওয়া হয়েছে।
তাহলে এর আগে তারা কীভাবে চাল পাচ্ছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে হাবিবুল্লাহ বলেন, এর আগে অন্যজনের নামে বরাদ্দ থাকা চাল তাঁদের দেওয়া হতো। এসব চেয়ারম্যানের আমলে হয়েছে। এই ২২ জনকে চাল দিয়ে দিলে যদি তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরা এসে চাল দাবি করেন, তাহলে আমি চাল কোথা থেকে দেব? ১শ’ ৩২ বস্তা চালের দাম তো অনেক।
তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তালিকায় থাকা নামের কোনো ব্যক্তি এসে চাল উত্তোলনের দাবি করেননি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ আরও জানান, এ বিষয়ে ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, চালগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। জটিলতা নিরসন করে দ্রুত চাল বিতরণের কথা।
আপনার মতামত লিখুন : :