সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা এবং ঠিকাদারের গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া সড়কের কাজ। দীর্ঘ প্রায় তিন বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় সড়ক ব্যবহারকারী কয়েক লাখ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রহস্যজনক কারণে ঠিকাদার কাজ শেষ করছেন না। ভোগান্তি লাঘবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৬৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া সড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে রিজিড প্রেভমেন্ট ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ। ঢাকার ধানমন্ডির আইসিসিএল-র্যাব-আরসি নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
সরেজমিনে দেলদুয়ার থেকে লাউহাটি পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বেশিরভাগ অংশে খানাখন্দসহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ফরমান বলেন, এই সড়কে রিকশা নিয়ে এলে নষ্ট হয়ে যায়। যে টাকা ইনকাম হয় তার বেশিরভাগ দিয়ে রিকশা মেরামত করা লাগে।
মোটরসাইকেল আরোহী ফরহাদ হোসেন বলেন, ভোগান্তি লাঘবের জন্য সড়কের উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছিল। কিন্তু কাজ তো শেষ করছে না। যেটুকুতে কাজ হয়েছে সেখানেও নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করেছে। এর কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারের কর্মচারীরা বলত অফিসের সঙ্গে কথা বলেই সব করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজল হক বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা সড়কের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার। তাদের সবার যোগসাজশে ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে না। এ বিষয়ে তদন্ত করলে অনিয়ম ও দুর্নীতি বের হয়ে আসবে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তদন্ত করার দাবি জানাই।
ঠিকাদারের প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল মান্নানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সড়কের কতভাগ কাজ শেষ হয়েছে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শামীম হোসাইনও জানাতে পারেননি।
দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদাররা চান আমরা সাইটে কম যাই। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেন। এমনকি তারা চিফ ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত অভিযোগ দেন। তারা যদি মাঠে এসে কাজ না করেন তাহলে তাদের কাজটি বাতিলে হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, গত বছরই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই সড়কের বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টাকেও অবহিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টার্মিনেশন করা হবে। পরবর্তীতে তাদের লাইন্সেস হ্যাম্পার করা হবে।
তবে কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে ও কত টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে তার কোনো তথ্য দিতে পারেননি নির্বাহী প্রকৌশলী।
আপনার মতামত লিখুন : :