• ঢাকা
  • সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বাঞ্ছারামপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস 


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | মনিরুজ্জামান পামেন জুন ৩০, ২০২৫, ১২:৩২ পিএম অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বাঞ্ছারামপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস 

অনেকেই ভেবেছিলেন মঞ্জুরুল হাসান বদলীর পর বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসটি অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত হবে, সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তি করবে। অথচ তা হয়নি, বরং আগের চেয়ে বেড়ে গেছে, এমন অভিযোগ সেবাপ্রত্যাশীদের।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার জবা মন্ডল। এ গ্রেড প্রাপ্ত এই কর্মকর্তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। ইতোপূর্বে তিনি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তাছাড়া তিনি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, পটুয়াখালীর দুমকী, নওগাঁর পোরশা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এবং নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালের ২ জুন তিনি চাকরিতে যোগদান করেন।
জবা মন্ডল বাঞ্ছারামপুরে যোগদানের পর উপজেলার সেবাপ্রত্যাশীরা বেশ আশাবাদী ছিলেন। অথচ সবই গুড়েবালি। একশ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেণ্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্ট্রার নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত কয়েক মাস যাবত সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এমন অভিযোগ সেবা প্রত্যাশীদের।
গত ১৫ বছর যাবত বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসটি দুর্নীতি আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর সাবেক সাব রেজিস্ট্রার মো. মঞ্জুরুল হাসান বাঞ্ছারামপুরে যোগদানের পরপরই অনিয়ম দুর্নীতির নতুন মাত্রা যোগ হয়। তারপর সাধারণ মানুষ তার বদলী দাবি করেন। সম্প্রতি তিনি বদলী হন এবং জবা মন্ডল বাঞ্ছারামপুরে যোগদান করেন। তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় যোগদানের অনেক পূর্ব থেকেই দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা দলিল লেখক সমিতি, মসজিদ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসের চাঁদা ছাড়া বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আনুমানিক প্রায় ৫ হাজারের উপর দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলিল হেবাবিল এওয়াজ, আমমোক্তার নামা ও দানপত্র ও ঘোষণাপত্র দলিল। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের রেজিস্ট্রি করা দলিল পরীক্ষা করলে এর সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করেন অনেকেই। ২০২৪ সালেও একই ঘটনা। ২০২৫ সাল তারই ধারাবাহিকতায় চলছে।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, শেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা এমনকি লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না।
সেবাপ্রত্যাশীদের অনেকেই নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও প্রাণের ভয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য জবা মন্ডলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

Side banner