ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রায় সবাই পলাতক থাকায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন। উপজেলার ১৩ জন চেয়ারম্যান সরাসরি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। হাতে গোনা কয়েকজন ইউপি সদস্য ছাড়া প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত। বিগত সময়ে মাঠ পর্যায়ে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের প্রতি নানা কারণেই সাধারণ মানুষ বিরক্ত ছিলেন। তারপরও স্থানীয় পর্যায়ে সেবাপ্রত্যাশীরা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারস্থ হতেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাতারাতি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চিহ্নিত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা গা ঢাকা দেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউপি সচিব।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও মামলা হামলা এবং নিরাপত্তাহীনতায় পরিষদে আসতে চান না বেশিরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান। সদস্যদের অনেকেও পলাতক। ইতোমধ্যে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও তাদের কাজকর্ম নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফলে পরিষদের সচিবরাই পরিচালনা করছে নানা কার্যক্রম।
বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তেজখালী ইউনিয়নে নিয়ামুল হক, পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নে রবি উল্লাহ, দরিয়াদৌলত ইউনিয়নে শরিফুল ইসলাম, সোনারামপুর ইউনিয়নে মুজাহিদুল ইসলাম পারভেজ, দরিকান্দি ইউনিয়নে মোজাম্মেল হক, ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নে মো. কামাল, বাঞ্ছারামপুর সদর ইউনিয়নে মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ, আইয়ুবপুর ইউনিয়নে দবির ভুঁইয়া, ফরদাবাদ ইউনিয়নে পাপিয়া আক্তার, রূপসদী ইউনিয়নে নাছির উদ্দিন, ছলিমাবাদ ইউনিয়নে মো. জাকারিয়া, উজানচর ইউনিয়নে আরাফাত আহমেদ এবং মানিকপুর ইউনিয়নে লোকমান হোসেন কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নানাভাবে বিতর্কিত।
উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব আশিকুর রহমানের নামে নানা অভিযোগ ছিল। পত্রপত্রিকায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে হারভেস্ট মেশিন কেলেংকারির জন্ম দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। নানাবিধ অভিযোগের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উপ পরিচালক (উপ সচিব) শঙ্কর কুমার বিশ্বাস তাকে বিজয়নগর উপজেলায় বদলী করেন। অন্যদিকে বিজয়নগর উপজেলা থেকে মো. জাকারিয়াকে ছলিমাবাদে পোস্টিং দেন।
দীর্ঘদিন যাবত উজানচর ইউনিয়নে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আরাফাত আহমেদ। মাঝখানে কয়েক মাসের জন্য বদলী হয়েছিলেন। বর্তমানে আবারও উজানচর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে সীমাহিন অভিযোগ রয়েছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাদিদ আল রহমান জনি চেয়ারম্যানের বেশির ভাগ জায়গা জমি রেজিস্ট্রি হতো ইউপি সচিব আরাফাতের নামে। জায়গা জমি কেনা বেচা বাণিজ্য, রেজিস্ট্রি খারিজ ও ইউনিয়নের সমস্ত অবৈধ অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত আরাফাতের মাধ্যমেই হালাল করা হতো। তিনি বাঞ্ছারামপুরে প্রায় ৮ বছর যাবত কর্মরত রয়েছেন। অবৈধ টাকায় আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি ক্ষমতার দাপট দেখাতেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই।
এদিকে ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পাপিয়া আক্তারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব হলো স্থানীয় সেবা প্রদান যেমন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণ। এ ছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসবের নিয়ন্ত্রক এখন ইউপি সচিব পাপিয়া আক্তার। ফরদাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম রাশেদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইউপি সচিব পাপিয়া আক্তার, এমন অভিযোগ করেছেন সেবা প্রত্যাশীদের অনেকে।
তেজখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নিয়ামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিষ্ণুরামপুরের আবু কালাম (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, ইউপি সচিব নিয়ামুল হক টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। টাকা দিলেই অবৈধ কাজ বৈধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক চেয়ারম্যান বলেন, একসময় ইউপি সচিব ভয়ে কথা বলতো না। এখন আমার অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দুহাতে টাকা কামাচ্ছে। আর আমরা দৌঁড়ের উপর আছি।
মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনৈক ইউপি সদস্য জানান, পরিষদের সচিব লোকমান হোসেন মেম্বারদের পাত্তাই দেন না। তাছাড়া তার ব্যবহারও ভাল নয়।
আপনার মতামত লিখুন : :