• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

যে কারণে লালনের আখড়ায় গিয়েছিলেন চমক


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | বিনোদন ডেস্ক অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০২:১২ পিএম যে কারণে লালনের আখড়ায় গিয়েছিলেন চমক

খুব জাঁকজমকভাবে এবার আয়োজিত হলো বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস। সে উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে বরাবরের মতো বসে লালন মেলা। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা লালন ভক্তরা এই মিলনমেলায় শামিল হন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকও। 
গত কয়েকদিন ধরে লালনের আখড়া থেকে চমকের বেশ কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে সম্পূর্ণ লালন ভক্তের বেশে, সাদা শাড়িতেই দেখা যায়। তবে অভিনেত্রী নিজে এতদিন কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তবে প্রথমবারের মতো এই লালন মেলা ভ্রমণ নিয়ে একটি চমকপ্রদ ভিডিও প্রকাশ করলেন তিনি। 
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে মজার ছলে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি লেখেন, লালনে যারা আমার অনেক ফটো ভিডিও তুলছো, তাদের জন্য বেটার কোয়ালিটির ভিডিও দিচ্ছি একটু পরেই। মোবাইলে এমবি আছে তো নাকি ওয়াইফাই।
সেই কথা মতোই কাজ হলো এবার। ফেসবুকে তিনি ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে লোকসংগীতের এই আখড়াবাড়ি এবং লালন শাহের জীবন-দর্শন সম্পর্কে নানা তথ্য।
ভিডিওতে দেখা যায়, অভিনেত্রী চমক নিজের সাজ আশাকে লালন মেলায় লোকসংস্কৃতির আবহকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সাদা শাড়ির সাথে মানানসই একটি রঙিন গামছা গায়ে জড়িয়েছেন। তার খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুলের মালা জড়ানো, হাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বালা, গলায় একাধিক পুঁতির মালা। তার ঐতিহ্যবাহী এই সাজের সাথে তাল মিলিয়ে তিনি হাতে ধরেছিলেন বাউলের প্রতীক ‘একতারা’। ভিডিওর একটি অংশে তাকে এক লালন ভক্তের পাশে বসে একতারা হাতে গান গাইতেও দেখা যায়।
এই ভিডিওটি শুরু হয় কুষ্টিয়ার লালন আখড়াবাড়ির প্রধান ফটকের সামনে রাতে জটলা হওয়া মানুষের ভিড় দিয়ে। এরপর আখড়াবাড়ির আলোকসজ্জিত চূড়া, মাঠ ও বিশাল একতারা-ডুগডুগির প্রতিকৃতি দেখা যায়। ভিডিওতে লোকশিল্পীরা একতারা, ডুগডুগি বাজিয়ে গান পরিবেশন করছেন। চমককে কখনো মানুষের ভিড়ে, কখনো আখড়াবাড়ির আঙিনায়, আবার কখনো বাউলদের আসরে একতারা হাতে দেখা যায়। শেষে লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শন নিয়ে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে কিছু দৃশ্য দেখানো হয়, যার মধ্যে কালীগঙ্গা নদীর তীরে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা লালন এবং একজন মুসলিম নারীর তাকে বাঁচানোর দৃশ্য ফুটে ওঠে। যা মূলত লালন সাঁইয়ের জীবন-সংশ্লিষ্ট একটি বহুল প্রচলিত লোককথা।
ভিডিওতে চমককে বলতে ইংরেজিতে বলতে শোনা যায় লালন সাঁইয়ের জীবন-দর্শন সম্পর্কেই। চমকের সেই কথাগুলোর অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘আপনি কি জানেন, কুষ্টিয়ায় প্রতি বছর একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা শুধু সংগীত নয়, বাংলাদেশের আত্মাকে উদ্যাপন করে।’
চমককে বলতে শোনায়, ‘লালন শাহ, একজন বাংলার সাধক। ২০০ বছরেরও বেশি আগে, কুষ্টিয়ার এক ছোট গ্রামে, কালীগঙ্গা নদীর কাছে একটি অসুস্থ ছেলেকে পাওয়া গিয়েছিল। এক মুসলিম নারী তাকে উদ্ধার করে এবং তাকে জীবন ফিরিয়ে আনে। পরে, এই ছেলেই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক হিসেবে পরিচিতি পান লালন ফকির, লালন শাহ নামে। কিন্তু লালন শাহের আসল জন্ম নাম বা ধর্ম সম্পর্কে কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না। হয়তো এই রহস্যটিই ছিল আসলে লালনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা।’
চমক বলেন, ‘আজ আমরা লালন মেলায়, যেখানে বিশ্বাস, স্বাধীনতা এবং লোকজ্ঞান এক আকাশের নিচে মিলিত হয়।’
এরপর সামজিক মাধ্যমে ক্যাপশনে চমক জানিয়ে দেন, এটি একটি ভ্লগ, যার শিরোনাম ‘চমকের সাথে বাংলাদেশকে আবিষ্কার। পর্ব-৪’। লেখেন, ‘সুধীজনেরা, এখানে আমি উপস্থাপন করছি আমাদের আত্মা ও মাটির সংগীত... আমাদের আধ্যাত্মিক শিকড়... আমাদের লালনকে... বিশ্ববাসীর কাছে।’
নেটিজেনরা চমকের এই নতুন ধরনের কনটেন্টকে বেশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। তাদের মন্তব্যগুলো ছিল এমন, ‘এই যে না হইল আসল চমকের চমৎকার টাইপের কনটেন্ট’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এই ধরনের কনটেন্টের জন্যই আমি ইন্টারনেটের বিল দিতেও রাজি।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি লালন ফকিরের এই ডকুমেন্টস টা ইংরেজি তে করার জন্য।’
এই ডকুমেন্টারি ধাঁচের এই ভ্লগটি এমনই ইঙ্গিত দেয়, অভিনেত্রী চমক তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল বা প্ল্যাটফর্মে ‘ডিসকভারিং বাংলাদেশ উইথ চমক’ শিরোনামে ধারাবাহিক কনটেন্ট নির্মাণ করছেন, যার চতুর্থ পর্বটি লালন শাহ ও তার দর্শনকে ঘিরে নির্মিত।

Side banner