• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

বাঞ্ছারামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | মনিরুজ্জামান পামেন জুলাই ৬, ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম বাঞ্ছারামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্লিপের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ বছর যাবত উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ অভিযোগ থাকলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে স্লিপ (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) ফান্ডের বেশির ভাগ টাকা লুটপাট হচ্ছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তৎকালিন শিক্ষা কর্মকর্তা নৌসাদ মাহমুদের সময় স্লিপ ফান্ডের টাকা সবচেয়ে বেশি হরিলুট হয়েছে। 
প্রতি বছর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। অনেক স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজ না করে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুষ্ঠু মনিটরিং ও জবাবদিহিতা না থাকায় প্রতি বছরই সরকারের বরাদ্দকৃত মোটা অংকের টাকা লুটপাট চলছে।
২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্লিপ কার্যক্রমের ব্যয় নির্বাহের জন্য ১ম পর্যায়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। একইভাবে ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই অর্থবছরে স্লিপ কার্যক্রমের জন্য ২য় পর্যায়েও একই টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দুইবারে উপজেলায় মোট বরাদ্দ আসে ৮৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ৫০ হাজার টাকা, ৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ৭০ হাজার টাকা এবং ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। ওই অর্থবছরে বরাদ্দকৃত স্লিপের টাকা বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়ছয় হলেও ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই উপজেলাভিত্তিক স্লিপের বাস্তবায়ন শতভাগ বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ। পরের অর্থবছরেও একই অবস্থা। 
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ম পর্যায়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৬ লাখ ৫ হাজার ২শত ৫৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল ২য় পর্যায়ের মঞ্জুরি ও বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক অর্থ ব্যয় করার নির্দেশনা থাকলেও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তা উপেক্ষিত। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ভাগ ভাটোয়ারা করায় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুেেলাতে বেশিরভাগ অনিয়ম হচ্ছে। এর সঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের আশেপাশে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাকার সঠিক ব্যবহার হলেও তেজখালী, পাহাড়িয়াকান্দি, দরিয়াদৌলত, সোনারামপুর, ফরদাবাদ, ছলিমাবাদ, উজানচর ও মানিকপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ বিদ্যালয়েই ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া স্লিপের টাকা খরচের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও সদস্যরা মিলে পরিকল্পনা করার কথা থাকলেও তা অনেক বিদ্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এর আলামত পাওয়া যায়নি। 
গত ৪-৫ বছর যাবত বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নামে-বেনামে বিল ভাউচার দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। যা পরবর্তী সময়ে উপকরণ কেনার ক্ষেত্রেও একই ভাউচার দেখানো হয়েছে। ব্যাংক থেকে স্লিপের টাকা উত্তোলনের জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে পরিকল্পনা ফরমে বিভিন্ন উপকরণ কেনার ক্ষেত্রেও একই ভুয়া-ভাউচার দেখিয়ে বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাল কিনেছেন এক জায়গায় কিন্তু বিল-ভাউচার দেখানো হয়েছে অন্য জায়গার। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানে উপকরণ কেনার কোন বিল-ভাউচার বা অফিস ফাইল কিছুই নেই। ফুলের বাগান তৈরির জন্য ভাউচার দেখালেও বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই নেই ফুলের বাগানের অস্তিত্ব। এ ছাড়া স্লিপের উপকরণ কেনার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি আলাদা স্লিপ কমিটি থাকলেও প্রধান শিক্ষকরা তাদের না জানিয়েই নিজের ইচ্ছামতো উপকরণ কিনেছেন। নির্দিষ্ট দোকান থেকে উপকরণ কেনা ও তৈরিতেও শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ। যদিও বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকটা কমে আসছে বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এ টাকা ব্যয় করেন। তাদের পরামর্শে সংশ্লিষ্ট দোকান থেকে উপকরণ কেনা হয়েছে। ফলে উপকরণের পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের খেলার জন্য দোলনা স্লিপারে দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। স্লিপ কমিটির রেজ্যুলেশন খাতায় একই ব্যক্তির একাধিক স্বাক্ষরসহ নানা অসঙ্গতিও দেখা গেছে। এভাবে উপকরণ কেনার নামে নয়ছয় করা হয়েছে। আবার প্রাথ-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সুসজ্জিতকরণ কক্ষ নির্মাণ ও ঘরের চারিদিকে দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন চিত্র এবং ঘর সজ্জিতকরণের কথা থাকলেও তারা তা করেননি। অনেক বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ৫ হাজার টাকা করে তুলে খরচ দেখালেও তাদের বিদ্যালয়ে কোন সুসজ্জিতকরণ কক্ষ দেখতে পাওয়া যায়নি।
উপজেলার বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের টাকার মাধ্যমে টয়লেট, টিউবয়েল ইলেকট্রিক ও ওয়াটার স্যানিটেশন কাজ করার বিষয়ে বলা হলেও সেসব টয়লেট বা টিউবওয়েলে কোন মেরামতের ছোঁয়া লাগেনি। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্লিপের টাকার কোন রেজ্যুলেশন লেখা হয় না। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে মা সমাবেশ হওয়ার কোন তথ্য নেই। সাংবাদিক যাওয়ার কথা শুনে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান লাইব্রেরী ও মনোহরি দোকানে দৌঁড়ঝাঁপ করে প্যাড সংগ্রহ করেছেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শিক্ষানুরাগী সচেতনমহল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, একই সাথে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। 

Side banner