ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে তাকে দুই মাসের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাশেদুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি সূত্রে জানা যায়। সাময়িক বরখাস্তের বিবৃতি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের দৈনিক ক্যাশ বই ও ব্যাংক হিসাব যাচাই-বাছাই করে এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা লোপাটের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে। এর কারণ জানতে চাইলে যথাযথ কোনো কারণ দেখাতে পারেননি তিনি। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব থেকে তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা নিয়মের বাইরে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
এসব অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে গভর্নিং বডির আইন ও ক্ষমতাবলে ১৯ অক্টোবর থেকে আগামী দুই মাস সাময়িক বরখাস্ত করা হয় প্রধান শিক্ষককে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই বরখাস্তের সময় আরো বাড়তে পারে। এসময় কালীন প্রধান শিক্ষক চাহিবামাত্র দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন।
বরখাস্তকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করা হয়।
এর আগে রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ের তদন্ত ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও রূপসদী উত্তর বাজারে শিক্ষার্থী-এলাকাবাসীর ব্যানারে হয় এই কর্মসূচি।
এসময় বিক্ষুব্ধ জনতার স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চান তারা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিছিল আর স্লোগানে রূপসদী উত্তর বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয় এসময়। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা অর্থ কেলেঙ্কারিসহ সীমাহীন দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান জানান দেন স্থানীয়রা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে অনিয়ম। কোটি টাকা লোপাট করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় একটি মহল। এমন সীমাহীন অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। এমন অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাশেদুল হক পলাশ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বেতন ও অন্যান্য ফি যথাযথভাবে ব্যাংকে জমা না করে কোটি টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন।
রাশেদুল হক জানান, জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ক্যাশ-খাতা ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করার পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক মূল হিসাব আড়াল করতে ডুপ্লিকেট বা ভুয়া ক্যাশ বই তৈরি করেছেন।
এসব নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানান সভাপতি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউএনও।
এসব নিয়ে পুরো উপজেলায় তোলপাড় শুরু হলে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন নূর মোহাম্মদ জমদ্দার। এই প্রেক্ষিতেই এবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে স্থানীয়রা।
আপনার মতামত লিখুন : :