• ঢাকা
  • শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

রত্নগর্ভা মায়ের সম্মাননা পেলেন রূপসদী গ্রামের আবেদা খাতুন


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | মনিরুজ্জামান পামেন জুন ৫, ২০২৫, ০৮:২২ পিএম রত্নগর্ভা মায়ের সম্মাননা পেলেন রূপসদী গ্রামের আবেদা খাতুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামের আবেদা খাতুন পেলেন রত্নগর্ভা মায়ের সম্মাননা। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে গর্বিত জননীর সন্তানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।
রূপসদী মাহাবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও নার্সিং ইন্সটিটিউট কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রত্নগর্ভা মা আবেদা খাতুনের বড় ছেলে অধ্যক্ষ ডাক্তার হারুন অর রশীদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাঞ্ছারামপুর সরকারি এস এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস বিএসসি।
রত্নগর্ভা জননী আবেদা খাতুনের স্বামী ছিদ্দিকুর রহমান। পেশায় তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। ঐতিহ্যবাহী রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা ছিলেন ছিদ্দিকুর রহমান। এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহ সমাজসেবায় অনন্য অবদান রাখেন তিনি। 
মো. ছিদ্দিকুর রহমান ও আবেদা খাতুন দম্পত্তি ৭ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক জননী। তাদের প্রথম সন্তান অধ্যাপক ডাক্তার মো. হারুন অর রশিদ। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। 
ডাক্তার হারুন অর রশীদ ১৯৮০ সালে রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি, ১৯৮২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকিয়াট্রি বিষয়ে এমফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ১৯৯৩ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ২০২১ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। অধ্যাপক পর্যন্ত দীর্ঘদিন তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। 
ডাক্তার হারুন অর রশীদ কুমিল্লা শহরের একজন খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ডাক্তার হারুন অর রশীদ। সম্প্রতি তিনি অবসরগ্রহণ করেন। তার স্ত্রী নাজমুন নাহার কুমিল্লা অজিতগুহ কলেজের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ডাক্তার হারুন অর রশীদ ও অধ্যাপক নাজমুন নাহার দম্পত্তির তিন সন্তান। তাদের মধ্যে বড় সন্তান চিকিৎসক, ২য় সন্তান মেডিকেল কলেজের ছাত্র এবং ৩য় সন্তান এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ছাত্রজীবনে ডাক্তার হারুন অর রশীদ ঢাকাস্থ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রছাত্রী মৈত্রী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 
আবেদা খাতুন ও ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. জাকির হোসেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগ্মসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 
মো. জাকির হোসেন ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। তারপর ৭ম শ্রেণী থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বরিশাল ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করেন এবং কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। 
মো. জাকির হোসেন ২০০৩ সালে সহকারি কমিশনার হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা এবং কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারপর ঢাকায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাকরির পর জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর পদে সুনামের সাথে ৫ বছরের বেশি সময় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার স্ত্রী রোকসিন্দা ফারহানা প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের একজন মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি উপ সচিব পদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। জাকির হোসেন ও রোকসিন্দা ফারহানা দম্পত্তির দুই কন্যা সন্তান। তারা ৯ম ও ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী।
ছিদ্দিকুর রহমান ও রত্নগর্ভা জননী আবেদা খাতুনের আরেক ছেলে প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ। তিনি বর্তমানে গোমতী গ্রুপের গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোপূর্বে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপের মাইমন টেক্সটাইলের হেড অব অপারেশন এর দায়িত্বে ছিলেন। প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করা একজন মেধাবী ও সফল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তার স্ত্রী রোকসানা পারভীনও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী।
আবেদা খাতুনের আরেক সন্তান মকবুল হোসেনও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানীতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তার সন্তান ইসমাইল হোসেন একজন সফল ব্যবসায়ী। রাজধানী ঢাকার ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের সফল ব্যবসায়ী মাহবুবুর রশীদ। তিনি ডেল্টা সু এর কর্ণধার। আবেদা খাতুনের অন্য সন্তানদের মতো মাহবুবুর রহমানও একজন সামাজিক ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। রত্নগর্ভা জননীর আরেক ছেলে ইব্রাহিম খলিল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে সড়ক র্দূঘটনায় ইন্তেকাল করেন। 
সফল ও গর্বিত জননীর কন্যা শিউলি আক্তার ইতিহাস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তার স্বামী আজমল হাসান অপু একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তার আরেক মেয়ে শাহেরা বেগম। তিনি বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী ছিলেন। কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করেন। তার স্বামী একজন সফল ব্যবসায়ী।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আলোকিত মানুষ ছিলেন ছিদ্দিকুর রহমান। তার স্ত্রী আবেদা খাতুন সন্তানদের সত্যিকার অর্থেই মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এই দম্পত্তি সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি এলাকার সার্বিক উন্নয়নেও ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। বাবা মায়ের নীতি ও আদর্শকে বুকে ধারণ ও লালন করে এই পরিবারের সন্তানরা রূপসদীর অসংখ্য সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত। শুধু রূপসদী নয়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মাটি ও মানুষের কল্যাণে আবেদা খাতুন ও ছিদ্দিকুর রহমানের সন্তানরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামীদিনেও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান রত্নগর্ভা মা আবেদা খাতুনের সন্তানেরা। 

Side banner